মমতাকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা পশ্চিম বঙ্গের জনগণকে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মে ২০২১, ৯:০৮:২৩ অপরাহ্ন
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তৃতীয় বারের মতো মূখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। নির্বাচনে উপর্যুপরি জয়লাভ এবং এবার বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ায় রাজ্যজুড়ে তার জনপ্রিয়তার বিষয়টি এখন পরিষ্কার। তবে তার বিজয় মুকুটে আরেকটি পালক হিসেবে যুক্ত হয়েছে প্রতিবেশি বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসা।
নির্বাচনের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষকে মমতার বিজয়ের জন্য শুভ কামনা ও প্রার্থনা করতে দেখা গেছে। আর বিজয়ের পর পশ্চিমবঙ্গের মতো বাংলাদেশের জনগণের মাঝেও আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। বলা বাহুল্য ভারতের সাথে বাংলাদেশসহ তার প্রতিবেশি দেশগুলোর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়। সত্যি বলতে কি বাংলাদেশের সরকারের সাথে স্বার্থের কারণে ভারত সরকারের দহরম মহরম থাকলেও এদেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভারতের ক্ষমতাসীন বর্ণবাদী বিজেপি সরকারকে ঘৃণা করে। আর এই ঘৃণার পেছনে অনেক যৌক্তিক কারণ বিদ্যমান।
মুসলমান পবিত্র মসজিদ বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সাম্প্রদায়িক তৎপরতার মাধ্যমেই ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র উত্থান। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, বিভক্তি ও ঘৃণা সৃষ্টির রাজনীতির মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এই দল। ভারতের বৃহত্তর উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনগোষ্ঠী তাদের সমর্থন করলেও সচেতন, বিবেকবান, গণতন্ত্রকামী ও শান্তিপ্রিয় ভারতীয়রা বিজেপি’র এই আদর্শ ও কর্মকা-কে কখনো সমর্থন করেননি। পশ্চিম বঙ্গের জনগণও কখনোই বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক আদর্শকে স্বাগত জানাননি, সমর্থন করেননি। আর এটা প্রমানিত হয়েছে এবারের নির্বাচনে। পশ্চিম বঙ্গের নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী বিজেপি’র। ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১৩ আসন নিয়ে বিজয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
পশ্চিম বঙ্গের নির্বাচন ঘিরে এবার বাংলাদেশের জনগণের মাঝে যে আগ্রহ ও উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে, অতীতে কখনো তা লক্ষ্য করা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এর প্রমাণ। পশ্চিম বঙ্গের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মন্তব্য ও বক্তব্যে রীতিমতো সয়লাব ছিলো ফেইসবুক। মমতার বিজয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে যে উৎসাহ উদ্দীপনা ও উল্লাস লক্ষ্য করা গেছে তা দেখে মনে হয়েছে এটা যেনো এদেশের কোন নির্বাচন। প্রশ্ন জাগতে পারে, এর কাণে কী? হ্যাঁ, কারণ তো অবশ্যই আছে। বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার হোতা ও মুসলিম নির্যাতনকারী বিজেপি’র ওপর সংগত কারণেই ক্ষুব্ধ। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে ক্ষমতার আসার পর মোদির বিজেপি সরকার ভারতের মুসলমানদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার এজেন্ডা গ্রহণ করে। ক্ষমতাসীন বিজেপি ভারতীয় মুসলমানদের ওপর শুরু করে অমানুষিক নির্যাতন।
গরু জবাই, গরু বিক্রির অভিযোগ তুলে বহু নিরীহ মুসলমানকে তারা পিটিয়ে হত্যা করে। অনেককে গোবর খেতে বাধ্য করে। মুসলিম নির্যাতন প্রকাশ্যে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। আসামের লাখ লাখ মুসলমানকে দেশ থেকে বিতাড়নের জন্য রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। এসব কর্মকা- বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের গভীর মর্মবেদনার কারণ হয়ে আছে দীর্ঘদিন যাবৎ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জনগণ প্রতিবেশি লাগোয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র পরাজয় কামনা করে। অপরদিকে তুলনামূলকভাবে অসাম্প্রদায়িক মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল মমতা বন্দোপাধ্যায় ও তার দলের প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থন দেখায় এদেশের জনগোষ্ঠী। যদিও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় বাংলাদেশ মমতার সরকারের প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধ, তা সত্বেও সামগ্রিক বিচারে পশ্চিম বঙ্গে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক বিজেপি’র পরিবর্তে মমতার তৃণমূলকেই ক্ষমতায় চেয়েছে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ। তাই মমতার বিজয়ে প্রকাশ্যে উল্লাস ও আনন্দ প্রকাশ করেছে এদেশের জনগণ।
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের সাথে পশ্চিম বঙ্গ সরকার ও রাজ্যটির জনগণের সম্পর্ক সম্প্রীতি ও সম্পর্ক আরো দৃঢ় ও সংহত হবে, এমন প্রত্যাশা আমাদের। ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক কারণে পশ্চিম বঙ্গের জনগণ আমাদের একান্ত আপন জন। তাদের সুখ সমৃদ্ধি আমাদেরও স্পর্শ করে। তাই তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয় ও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ক্ষমতা গ্রহণের এই শুভক্ষণে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে জনপ্রিয় নেত্রী মমতা ও পশ্চিম বঙ্গের জনগণের প্রতি আমরা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি।