করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সুষ্টু পরিকল্পনা প্রয়োজন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২১, ৯:৩৭:৩৯ অপরাহ্ন
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। প্রায় সকল সচেতন ও উন্নত দেশই এই অস্বাভাবিকতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোও সাধ্যমতো চেষ্টা করছে এই নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে। কারণ করোনা মহামারি কবে সম্পূর্ণ দূর হবে, তা বলা মুশকিল। যেভাবে বিভিন্ন দেশে ঘুরে ফিরে দ্বিতীয়-তৃতীয় হয়ে করোনা ফিরে আসছে, এতে এই মহামারি যে খুব শীঘ্রই বিশ্ব থেকে বিদায় নেবে, এটা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাংলাদেশকে এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত কোন সার্বিক সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। মহামারির ফলে সৃষ্ঠ কর্মহীনতা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য মোকাবেলায় কোন সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে দেখা যাচ্ছে না। আসছে বাজেট। মহামারির ফলে সৃষ্ট সংকট থেকে উত্তরণে এই বাজেটে নতুন ও কার্যকর কোন প্রস্তাব বা ব্যবস্থা রাখা হবে কি-না, এ নিয়ে কোন চিন্তাভাবনা বা আলোচনার কথাও শোনা যাচ্ছে না।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অনেকটা উদাসীন ও নির্বিকার ভাব নিয়ে অর্থাৎ ভাগ্যের হাতে সঁেপ দিয়ে বসে আছেন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত নেতা নেত্রী ও আমলারা।
এদিকে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর এক জরিপে দেখা গেছে, মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ২২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আয় কমে যাওয়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। জরিপে দেখা গেছে, কাজ হারানো বেশিরভাগ মানুষই নতুন করে কর্মসংস্থান করে নিলেও তাদের আয় কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে কর্মঘন্টা। আয় কমে যাওয়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকের ঋণ বেড়েছে। কেউ কেউ সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এ জরিপ করা হয়েছে। জরিপে আরো বলা হয়েছে ৬২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা কখনো না কখনো কর্ম হারিয়েছেন। তবে সবাই একই সময়ে হারাননি। বেশিরভাগ মানুষ গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে কাজ হারিয়েছেন। সাধারণ ছুটি বা লকডাউন চলছিলো। যারা চাকুরী হারিয়েছেন তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশ এক মাসে বেশী সময় কর্মহীন ছিলেন।
দেখা গেছে, কর্মসংস্থানটা এসেছে মূলতঃ কৃষিখাত থেকে। কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। কর্মসংস্থান ফিরলেও প্রায় ৪৫ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, আগে তাদের যে আয় ছিলো, এখন তার থেকে কম আয় হচ্ছে। উপরের তথ্য উপাত্ত ও পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, দেশে এখন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যখন দেশের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক পরিবারের আগের তুলনায় আয় কমে গেছে, তখন পরিস্থিতিকে গুরুতর বলতে হবে। এমনিতেই এদেশের অধিকাংশ মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ, কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে, এমন অবস্থায় নতুন করে আয় আরো কমে যাওয়া দেশের জন্য নিঃসন্দেহে অশনি সংকেত। কিন্তু এটা মোকাবেলায় সরকারকে এ পর্যন্ত তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
এদেশের কোটি কোটি মানুষ নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে না। এ অবস্থায় সেই মানুষেরা যদি বাধ্য হয়ে খাবার গ্রহণের পরিমাণ আরো কমিয়ে দেয়, তবে দেশে অপুষ্টি সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারন করতে পারে। দেখা দিতে পারে অপুষ্টিজনিত রোগব্যাধি এবং শারীরিক ও মানসিক জটিলতা। বাড়তে পারে হতাশা ও বিষন্নতার মধ্যে অসুস্থতা।
এদিকে করোনার অজুহাতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এটাও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় ইতোমধ্যে টিকা নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে সংকট। করোনা চিকিৎসা করতে গিয়ে দেশে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা হচ্ছে মারাত্মকভাবে ব্যাহত। ঔষধ নিরোধী রোগ জীবাণুর প্রকোপ বাড়ছে। সবমিলিয়ে করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ এখন সময়ের দাবি। আমরা সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহের মনোযোগ ও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।