বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ভিন্নচিত্র বাজারে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১২:৫৩ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বৈশ্বিক পণ্যবাজারঃ জ্বালানী ও খাদ্য এক বছর আগের দামে ফিরেছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে তেল ও খাদ্যের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন অনেকটাই কমে এসেছে। বিশেষ করে জ্বালানী তেল ও খাদ্যের দাম যুদ্ধ-পূর্বাবস্থায় ফিরে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে তেল ও খাদ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। টানা কয়েক মাস এসব পণ্যের দাম অনেকটাই বাড়তি ছিলো। বলা বাহুল্য, জ্বালানী দামের ওপর অনেক ধরনের পণ্যের দাম নির্ভর করে। সেজন্য জ্বালানীর দাম মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবতা হচ্ছে, জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির কারণেই মূলত: চলতি বছর বিশ্বের দেশে দেশে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি হয়েছে। আবার সেই মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার জেরে চাহিদা কমতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে জ্বালানীর দামও কমতে শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারীতে যুদ্ধ শুরুর পর এক পর্যায়ে অপরিশোধিত জ্বালানীর দর ব্যারেল প্রতি ১২৭ ডলারে ওঠে যায়। আর বর্তমানে অপরিশোধিত জ্বালানীর বৈশ্বিক মানদন্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দর ব্যারেল প্রতি ৭৬ দশমিক ১০ ডলার। ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর এই ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিলো ৭৪ দশমিক ৩৯ ডলার। অর্থাৎ জ্বালানী তেলের দাম এক বছর আগের পর্যায়ে ফিরেছে। একই সঙ্গে কমছে খাদ্যপণ্যের দাম। বিশ্বখাদ্য সংস্থার (এফএও) খাদ্য মূল্যসূচক এখন ঠিক এক বছর আগের অবস্থানে ফিরেছে। গত এক বছরে দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বেড়েছে গমের দাম। এফএও’র তথ্য অনুসারে, গত নভেম্বর মাসে বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। মূলত: কৃষ্ণসাগরভিত্তিক খাদ্য সংগ্রহ বিষয়ক উদ্যোগে রাশিয়ার আবার যোগ দেয়ার কারণে গমের দাম কমেছে।
এভাবে বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানী তেলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম অনেক কমলেও বাংলাদেশের বাজারে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। গত ১২ ডিসেম্বর ডেইলী স্টার-এ ওয়েজ গ্রোথ বিলো ইনফ্ল্যাশন ফর টেনথ মান্থ’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর পর গত ১০ মাসে শ্রমিকদের মজুরী বা বেতন বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির অনেক নীচে রয়ে গেছে। গত নভেম্বরে সাধারণ শ্রমিক কর্মীদের বেতন বা মজুরী বৃদ্ধি পায় মাত্র ৬.৯৮ শতাংশ, অপরদিকে মূল্যস্ফীতির হার ৮.৮৫ শতাংশ। সাধারণ মানুষ কীভাবে এই বর্ধিত বিল পরিশোধ করবে, এমন প্রশ্ন এখন অর্থনীতিবিদসহ সচেতন মহলে। এছাড়া সরকারের মূল্যস্ফীতির হিসাবও ত্রুটিপূর্ণ বলে অনেকের অভিমত। এই হিসাবে ইন্টারনেট মোবাইলসহ বিভিন্ন সেবাখাতে মূল্যবৃদ্ধির হিসাব ধরা হয় না। এটা যোগ করলে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ আরো বাড়বে।
এসব তাত্ত্বিক হিসাব বাদ দিলেও বাজারে গেলেই ভোক্তারা যে মূল্যবৃদ্ধির তাপ অনুভব করছেন এতে তাদের জীবন ও সংসার জ্বলে পুড়ে ছাই হওয়ার উপক্রম। শুধুমাত্র সিলেটের কিছু মিডিয়ার সংবাদসূত্রে দেখা যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের কারণে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস ওঠেছে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠেছে। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে সকল পণ্যের দামই আকাশচুম্বী। একই সাথে বিভিন্ন সেবার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। অথচ বিশ্ববাজারে এসব আমদানিপণ্যের দাম অনেক কমেছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানী তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে এই আমদানি পণ্যের দাম কমানো হয়নি। কয়েক মাস আগে এই পণ্যের দাম ৪০ শতাংশেরও বেশী বৃদ্ধি করা হয়। এর জেরে দেশের প্রায় সকল উৎপাদিত পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যায়। কিন্তু ক্ষমতার শীর্ষমহলসহ তাদের ঘনিষ্ঠ অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে এদেশের এসব পণ্যের দাম কমা দূরে থাক, ক্রমশ: আরো বাড়ছে। এতে রীতিমত হাহাকার দেখা দিয়েছে দেশের সিংহভাগ দরিদ্র মানুষের জীবনে। বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্যহ্রাসের প্রেক্ষাপটে দেশের বাজারে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম কমানো এখন সময়ের দাবি। আমরা এদিকে ক্ষমতার শীর্ষ মহলের হিতকামী নেতানেত্রী ও কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি ও কার্যকর উদ্যোগ কামনা করছি।