শীতকালে রেলওয়ের যে ডিভাইস প্রয়োজন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘নেই কুয়াশা রোধের প্রযুক্তি ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শীতে ঘন কুয়াশায় ট্রেন চালানোর আধুনিক প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশ রেলওয়েতে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, ঘন কুয়াশায় ট্রেনের আলো বেশী দূরে যেতে পারে না। কখনো ভিজিবিলিটি বা দৃশ্যমানতা ১০-১৫ ফুটে নেমে আসে। এ কারণে এ সময়ে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘন কুয়াশা রোধে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। ‘ফগ পাস সিস্টেম’ ট্র্যাক ডিটোনেটর, ‘লাইন মার্কিং’ ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তির বদলে এদেশের রেলে মান্ধাতার আমলের ‘পটকা’ পদ্ধতি চালু আছে। গত এক যুগে রেলে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও কুয়াশায় নিরাপদে ট্রেন চালানোর প্রযুক্তি কেনো যুক্ত করা হয়নি, এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
রেলওয়ে সূত্র প্রকাশ, বর্তমানে রেলের ইঞ্জিনের আলো নির্ধারিত আলোর চেয়ে প্রায় অর্ধেক। ইঞ্জিন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এমন অবস্থা। ফলে কুয়াশার সময় ট্রেন চালানোও ঝুঁকিপূর্ণ। পটকা পদ্ধতিও এক্ষেত্রে তেমন কাজে আসে না। পটকা পদ্ধতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে, যেসব এলাকায় ঘন কুয়াশা দেখা দেয়, সেসব স্থানে চালক লাল-সবুজ সিগন্যাল দেখতে পান না। তাই কুয়াশাপূর্ণ এলাকা নির্ধারণের জন্য লাইনের উপর পটকাগুলো ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বসিয়ে দেয়া হয়। যখন ট্রেন ওই পটকার ওপর দিয়ে চলে তখন বিকট শব্দ হয়। এতে চালক গার্ড বুঝতে পারেন, সামনে ঘন কুয়াশা রয়েছে। তখন ট্রেনের গতি কমিয়ে সাবধানে চালানো হয়। তবে একাধিক ট্রেনের চালক জানান, নামেই এই পটকা পদ্ধতি চালু আছে। কোন কোন স্থানে লাইনে পটকা বসালেও ফুটে না। শব্দও পাওয়া যায় না। অপরদিকে ফগ পাস সিস্টেম হচ্ছে, এ ধরণের ডিভাইস বা পদ্ধতিতে ট্রেনের গন্তব্য, সামনের দুটি স্টেশনের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্ক্রিনে, এছাড়া আরো নানা তথ্য দেয় এই ডিভাইস। চালকের সুবিধার জন্য থাকে ‘ভয়েস কমেন্ট্রি’। ট্রেন কোন স্টেশনের হোম সিগন্যাল থেকে কতোটা দূরে সেই তথ্যও দেয়। চালক সিগন্যাল দেখতে না পেলে সেই তথ্যও ফুটে ওঠে ডিভাইসের এলসিডি স্ক্রিনে। কুয়াশার জন্য ভিজিবিলিটি কম থাকলেও ডিভাইস দেখেই চালক বুঝতে পারেন সামনে লাল বা সবুজ সিগন্যাল। এছাড়া ডিভাইসের মাধ্যমে লেভেল ক্রসিং সংক্রান্ত তথ্যও পাওয়া যায়। ‘ট্র্যাক ডিটোনেটর’ ও ‘লাইন’ মার্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে ঘন কুয়াশা, অকেজো সিগন্যাল ভাঙ্গা রেলপথের তথ্য তাৎক্ষণিক কন্ট্রোল রুম, ইঞ্জিন ও গার্ড রুমে থাকা ডিজিটাল স্ক্যানে ভেসে ওঠে, যা দেখে চালক-গার্ড দুর্ঘটনা রোধ করতে পারেন। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) বলেন, শীতে ট্রেন পরিচালনায় ঘন কুয়াশা বড়ো বাধা। দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনা-এগুলোর বেশীর ভাগই ঘটে ঘন কুয়াশার কারণে।
বলা বাহুল্য, বিশ্ব এমন কি এশিয়া ইতোমধ্যে রেলওয়ে যোগাযোগে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে মান্ধাতার আমলে পড়ে আছে। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এবং ট্রেন চলাচল নির্বিঘœ করতে শীতকালে অতি প্রােজনীয় উপরোক্ত ডিভাইস ও ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে শীত বাড়তে শুরু করেছে, কুয়াশাও বাড়ছে। এ অবস্থায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া ঘন কুয়াশায় ট্রেন পরিচালনা যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এতে কোন সন্দেহ নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় বাংলাদেশ রেলওয়েকে এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করতে হবে। অন্যথায় যে কোন সময় বড়ো ধরণের দুর্ঘটনা ও বিপত্তি ঘটতে পারে।