মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কি ঘটতেই থাকবে?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৩৭:৫২ অপরাহ্ন
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রানহানির ঘটনা যেনো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রায় প্রতিদিন এক বা একাধিক লোকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটছে। গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হিয়ালা এলাকায় এক মোটর সাইকেল আরোহী নারীর মৃত্যু ঘটে। একই দিন মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিরাজুর রহমান। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন-এর এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ১১ মাসে দেশে প্রায় আড়াই হাজার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৩ সহস্রাধিক জন। দেখা গেছে, দেশে গত কয়েক বছর ধরেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। বিশেষ করে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কিশোর তরুণদের মৃত্যুর ঘটনা বেশী। গত বছরের তুলনায় এ বছর এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা প্রায় ২২ শতাংশ বেড়েছে, প্রানহানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনটি বলেছে, বেপরোয়াভাবে কিশোর যুবকদের মোটরসাইকেল চালানো, মোটরসাইকেল চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির ক্ষেত্রে শিথিলতা এবং সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, গত এক যুগে এদেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে নিবন্ধিত মোটরযানের ৭১ শতাংশই হচ্ছে মোটরসাইকেল। শুধু রাজধানীতেই চলছে ১৫ লাখের বেশী মোটরসাইকেল।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৭৭০ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। জাতির প্রাণপ্রবাহ স্বরূপ এই বিপুল সংখ্যক তরুণ যুবার মৃত্যু শুধু সংশ্লিষ্ট পরিবারই নয়, গোটা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
দেখা গেছে, মোটরসাইকেল চালানোর সময় অনেক ক্ষেত্রেই চালক ও আরোহীরা নিয়ম মানছেন না। হেলমেট না পরেই তাদের মোটরসাইকেল চালাতে কিংবা এর আরোহী হতে দেখা যাচ্ছে। উপরোক্ত হবিগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নারী নিহত হওয়ার ঘটনায় দেখা গেছে, তিনি হেলমেট ছাড়াই মোটরসাইকেলের আরোহী হয়েছিলেন। ছিটকে পড়লে মাথায় আঘাত পেয়ে তিনি মারা যান।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, তরুণ যুবারা যখন মোটরসাইকেল চালায়, তখন তাদের মনে এক ধরনের অহংকার ও বেপরোয়া মনোভাব কাজ করে। কাজ করে বাহাদুরী দেখানোর মানসিকতা। এর ফলে কমে যায় সতর্কতা ও সাবধানতাবোধ। ঘটে দুর্ঘটনা। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির পাশাপাশি অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও পরামর্শ প্রদান জরুরী। এ নিয়ে নিয়মিত সেমিনার, আলোচনা সভা অনুষ্ঠান এবং মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা দরকার।
অনেকের মতে, দেশে মোটরসাইকেলের অস্বাভাবিক সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে দায়ী হচ্ছে গণপরিবহনের স্বল্পতা। বাস সার্ভিস ও রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনে নানা অসুবিধা, ভাড়া বৃদ্ধি, টিকেট স্বল্পতাও এজন্য অনেকাংশে দায়ী। সাম্প্রতিককালে জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির দরুণ যানবাহনের ভাড়া অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন মোটরসাইকেল ক্রয়ে কিংবা শেয়ার রাইডিং ব্যবহারে। শেয়ার রাইডিংয়ের কারণেও সড়কে মোটর সাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে।
সর্বোপরি, দেশে যানবাহন চলাচলে সুষ্ঠু সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে না ওঠায়, বিশেষভাবে এতো বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা কোন রাস্তা বা লেন না থাকায় প্রতিনিয়ত এতো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে। এর রাশ টেনে ধরতে হবে। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।