বেসরকারি শিক্ষায় অশনি সংকেত!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৪:১৭ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘সরকারিতে হুড়োহুড়ি বেসরকারিতে ফাঁকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নতুন বছরে নতুন শ্রেণীতে স্কুলের শূন্য আসনে ভর্তিতে পরীক্ষার পরিবর্তে এবারো হবে লটারি। সরকারি বেসরকারি উভয় স্কুলেই শিক্ষার্থী ভর্তির লটারি অনুষ্ঠিত হবে আগামী সপ্তাহে। ইতোমধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ অনলাইনে আবেদন শেষ হয়েছে। আবেদনের পরিসংখ্যান বলছে, স্কুলে ভর্তিতে সরকারি স্কুলকে যেভাবে অভিভাবকরা প্রাধান্য দিচ্ছেন বেসরকারি স্কুল সেই তুলনায় হিসাবের মধ্যেই রাখছেন না তারা। অর্থাৎ সরকারি স্কুলের জন্য এক প্রকার হুড়োহুড়ি চললেও বেসরকারি স্কুলের প্রায় ৭০ ভাগ আসনই থাকবে থাকবে ফাঁকা। এটা এক ধরনের অশনি সংকেত বলে সচেতন মহলের অভিমত। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্র বলছে, সরকারি স্কুলের প্রতিটি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে গড়ে ৬টি। অপরদিকে বেসরকারি স্কুলে গড়ে প্রায় ৩ টি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ১টি।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন শেষ হয়েছে সূত্র মতে, সরকারি বিদ্যালয়ে আসন প্রতি প্রায় ৬ জন করে আবেদন জমা দিয়েছে। আর বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন শেষ হয়েছে। সূত্র মতে, সরকারি বিদ্যালয়ে আসন প্রতি প্রায় ৬ জন করে আবেদন জমা দিয়েছে। আর বেসরকারি বিদ্যালয়ে সাড়ে ৩ আসনে ১ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। এর মধ্যেও প্রায় ৭০ হাজার আবেদনকারী এখনো আবেদন ফী জমা দেয়নি। বেসরকারী স্কুলে বেশীর ভাগ আবেদন ঢাকা মহানগরসহ অন্যান্য জেলা শহরের বড়ো বড়ো বিদ্যালয়ে এসেছে। অনেক বেসরকারি বিদ্যালয়ে একজনও আবেদন করেনি। অনেকের মতে, বর্তমান প্রতিষ্ঠান ছাড়তে চাচ্ছে না বলে আবেদন করেনি অনেকে। করোনার কারণে অনেকে পড়াশোনায় পিছিয়ে গেছে বলেও কেউ কেউ পুরোনো স্কুলে থাকতে চাচ্ছে, অন্য বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। সম্প্রতি ইউনেস্কোর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অনেক বেসরকারি স্কুলের ফী সরকারি স্কুলের তুলনায় তিনগুণ বেশী। এর ফলে এসব স্কুলের সুফল দরিদ্রতম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায় না। প্রাইভেট পলিটেকনিকে সন্তানের পড়ার খরচ যোগাতে এক তৃতীয়াংশ পরিবারকে ঋণ করতে বাধ্য হতে হয়।
বলা বাহুল্য, সরকারি স্কুলগুলোর ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অধিক আগ্রহের কারণে এবার সরকারি বিদ্যালয়ে চাপ সৃষ্টি হলেও বেসরকারি স্কুলগুলোর বিপুল সংখ্যক আসন ফাঁকা থেকে যাবার সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে সরকারি স্কুলগুলোতে বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা এবং এর বিপরীতে বেসরকারি স্কুলগুলোতে এগুলোর অভাব বা ঘাটতি এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদেশের গ্রামগঞ্জের অনেক স্কুলে ভৌত কাঠামোই নেই। গ্রামের বেশীর ভাগ স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাব সুবিধা নেই বললেই চলে। গ্রামাঞ্চলের অনেক সরকারি স্কুলে যখন এ ধরণের সুযোগ সুবিধা নেই বা কম, সেক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলগুলোর অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
বিগত করোনাকালে দীর্ঘদিন এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিলো। এই বন্ধের মেয়াদ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ ছিলো, শুধু একটি দেশ বাদে। করোনা শুরুর পর ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশের ১৬০ টিরও বেশী স্কুল বন্ধ ছিলো। এতে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় বহু বেসরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, অনেক শিক্ষক এই পেশা ত্যাগে বাধ্য হন। করোনার পর অনেক বন্ধ স্কুল আর খোলা হয়নি। যেগুলো খোলা হয়েছে, সেগুলোও আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি। আর্থিক সংকটের কারণে শিক্ষা উপকরণ ও আসবাবপত্র ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। ভালো বেতনে ভালো শিক্ষক নিয়োগদান কিংবা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এর ফলে দেশের বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে। সরকারি সহায়তা থাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে গেলেও অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী যেমন হতাশাগ্রস্ত, তেমনি নতুন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এগুলোর উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। বিগত বন্যার সময় সিলেট অঞ্চলে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলোর মধ্যে বহু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে এবারের নতুন বছরের ভর্তি পরীক্ষায়। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পুরোনো স্কুল ছাড়তে না চাওয়া কিংবা পড়াশোনায় পিছিয়ে যাওয়ার দরুণ এমনটি ঘটছে, এটা মনে করার কোন কারণ নেই।
এদেশের সরকারি শিক্ষার ঘাটতি পূরণে বেসরকারি খাত বড়ো ভূমিকা রাখছে। তাই সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঘাটতি ও দুর্বলতা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বিভাগ তথা সরকারের উর্ধ্বতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।