পৌষ মাসে যেনো কারো সর্বনাশ না হয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৪১:৩৮ অপরাহ্ন
শীত ঋতুর প্রথম মাস পৌষ শুরু হয়েছে। পৌষের প্রথম সপ্তাহেই বেশ দ্রুত নামছে তাপমাত্রার পারদ। শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্য প্রবাহ। সিলেট অঞ্চলে ৪/৫ দিন আগে প্রথম শৈত্য প্রবাহের আলামত দেখা গেলেও এখন ঠাণ্ডা-গরমের লুকোচুরি খেলা চলছে। এদিকে হিমেল বাতাস আর কুয়াশার দেশের উত্তরের জেলাগুলোর জীবনযাত্রা বিঘিœত হচ্ছে। গত শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদেশে হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নকূল মানুষ। বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবিরা। সকালের ঘন কুয়াশায় যানবাহন চলাচলেও দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে দেখা যাচ্ছে চালকদের।
বলা বাহুল্য, ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে শীত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। অনেকের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ঋতু। তবে ‘কারো পৌষ মাস, আবার কারো সর্বনাশ’ বলে একটি প্রবাদ চালু আছে এদেশে। এর পেছনেও নানা কারণ বিদ্যামান। পৌষ মাস তথা শীত ঋতুতে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের দুঃখ কষ্ট বাড়ে। এ সময় শ্রমজীবিদের কাজকর্ম না থানায় তাদের আয় রোজগার কমে যায়। এছাড়া পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ঠাণ্ডায় কষ্ট পায় গরিব লোকজন। অবশ্য বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বস্ত্র সমস্যা তেমন নেই। এছাড়া বিত্তবান মানুষ ও বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠন কর্তৃক প্রতিবছর কম্বল ও অন্যান্য শীতবস্ত্র বিতরণের ফলে দরিদ্র শ্রেণির লোকজনকেও শীতে তেমন কষ্ট পেতে দেখা যায় না। তবে এসময় কাজকর্ম কমে যাওয়া কিংবা তীব্র ঠাণ্ডায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ায় দিন মজুরসহ মানুষের আর্থিক অনটন বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বৈশ্বিক বিভিন্ন কারণ ছাড়াও অন্যান্য কারণে বাংলাদেশে এক চরম আর্থিক দুরবস্থা বিরাজ করছে। খাদ্যপণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম লাগামহীন। এ অবস্থায় এবারের পৌষ মাস তথা শীত ঋতু যে কারো পৌষ মাস। কোন মাথা ব্যথা নেই সরকারের। ফলে পৌষ মাস বিত্তবান ও সুবিধভোগী শ্রেণীর জন্য গরম বস্ত্র পরে বিনোদন ও ভ্রমণের মৌসুম এবং বিত্তহীন মানুষের জন্য আর্থিক অনটনের মাস হয়ে আছে।
অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ফসল ওঠে গ্রামাঞ্চলে ঘরে ঘরে। পৌষে নতুন ধান্যে হয়। নবান্ন ও পিঠা পুলির উৎসব। কিন্তু উৎসবও এখন নানা কারণে মলিন ও নিরাপদ হতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় ‘ধানের আরো কারো সর্বনাশ হয়ে দেখা দিতে পারে, এমন আশংকা অমূলক নয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এ সময়ে কর্মসংস্থানের অভাব প্রকট হয়ে ওঠে। ফলে এসময় কাজের সন্ধানে বিপুল সংখ্য মানুষকে শহর ও নগরমুখী হতে দেখা যায়। যুগ যুগ ধরে এটা লক্ষণীয়। কিন্তু এই সংকটের সময় কর্মহীন মানুষের জন্য অতীতে কর্মসংস্থান কিংবা আর্থিক সহায়তার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি কোন সরকারকে। বর্তমানেও এ নিয়ে বাম্পার ফলন ও কৃষকের মুখে হাসি’ শীর্ষক নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এর মাঝে লুকিয়ে আছে নানা ব্যর্থতা ও দুঃখ-কষ্টের ঘটনা। কৃষিকর্মে সার ও সেচের ব্যয় বৃদ্ধি এবং কৃষকেরা ধান চালের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ার অভিযোগ এখন দেশব্যাপী। জ¦ালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে যেমন সারের দাম বেড়েছে, তেমনি পানি সেচেও বেড়েছে খরচ। জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিকর্মে ব্যয় বেড়েছে, বেড়েছে পণ্য পরিবহনের খরচ।
সরকারের ধান চাল সংগ্রহে নানা অনিয়ম কৃষকদের নিরুৎসাহিত করছে ধান বিক্রয়ে। উপযুক্ত মূল্য দেয়া হচ্ছে না তাদের, এমন অভিযোগ কৃষকদের। অপরদিকে মিলার ও বড়ো বড়ো কিছু কোম্পানীর অসৎ ব্যবসায়ী সি-িকেট কৃষকদের নিকট থেকে ধান চাল কিনে নিয়ে মজুত করছে। এক চেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল মুনাফা লুটছে। চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে উচ্চমূল্যে চাল বিক্রি করছে। ফলে ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দাম কমছে না। এভাবে গ্রামাঞ্চলে পৌষের নবান্ন ও পিঠাপুলির ভাগিদার হওয়ার স্বপ্ন তিরোহিত হয়েছে শহরাঞ্চলের মানুষের জীবন থেকে।
যা-ই হোক, শীত পড়তে শুরু করেছে। এ সময়ে দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষেরা যাতে তীব্র শীতে কষ্ট না পায় সেদিকে বিত্তবান মানুষসহ প্রশাসনের খেয়াল রাখা জরুরি। কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও আর্থিক সংকট দূরীকরণে সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় প্রকল্প ও পদক্ষেপ গ্রহণ। শীতে শীতজনিত বোগ্যব্যধির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এসময় এ দিকে বিশেস খেয়াল রাখা দরকার। সরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা এবং জনগণ পর্যায়ে শীতকালীন রোগব্যধির ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বিশেষভাবে শীতকালে শিশুদের অন্যতম ঘাতক ব্যধি নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। তাই এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। এভাবে ‘কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ’ না হয়ে সকালের আনন্দের পৌষ হয়ে ওঠুক, এমন প্রত্যাশা ও প্রার্থনা আমাদের।