রমজানে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শংকা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:৫৭:২৬ অপরাহ্ন
গতকাল ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, রমজান পণ্য অর্থাৎ পবিত্র রমজান মাসে বেশি ব্যবহৃত পণ্যের প্রায় সবই আমদানি নির্ভর। এগুলোর মধ্যে ছোলা, খেজুর, তেল, ডাল, চিনি, ময়দা ইত্যাদি অন্যতম। আসন্ন রমজানে এসব কিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে পারে এমন আশংকা আমদানিকারক ও গ্রাহকদের। অনেকের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানির জন্য এলসি বা ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে ভোজ্যতেল ও খেজুরের মতো রমজানের আবশ্যকীয় পণ্যের আমদানি গত বছরের তুলনায় ৪২ থেকে ৪৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া ছোলার আমদানি হ্রাস পায় গত বছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায়। সোয়াবিন বীজের আমদানি কমেছে ৮৩ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, আমদানি হ্রাস পাওয়ায় বিভিন্ন পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের মতে, গত বছর রমজানে ছোলা প্রতি কেজি ছিলো ৭০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। রমজানের শুরুতে ছোলার দাম একশ’ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আমদানিকারকদের মতে, ব্যাংক যদি এলসি খোলার বিষয়ে কড়াকড়ি শিথিল না করে তবে রমজানের পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য সামগ্রী আমদানি করা সম্ভব হবে না। ফলে বাজারের চাহিদাও মেটানো যাবে না। তারা বলেন, এলসি খোলার পর পণ্য আমদানির জন্য দেড় মাসের মতো সময় লেগে যায়। দেশের ভোক্তা পণ্যের অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বলেন যে, এবার রমজানে পণ্য আমদানি গতবারের চেয়ে কম হবে। আর যেহেতু চাহিদার তুলনায় আমদানি কম, তাই দামও বৃদ্ধি পাবে এসব পণ্যের। এক পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি অর্থ বছরে গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় ২২ হাজার টন খেজুর আমদানি করা হয়েছে। অথচ গত অর্থ বছরের একই সময়ে খেজুর আমদানির পরিমাণ ছিলো ৪০ হাজার ৮০১ টন অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি।
পণ্য আমদানিকারকেরা বলেন, আমদানিকারকেরা সাধারণতঃ পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রতিযোগিতা করেন। কিন্তু বর্তমানে আমদানিকারকেরা চাহিদা অনুসারে পণ্য আমদানি করতে না পারছেন না। ডলার সংকটে এলসি খোলায় বিধি নিষেধের কারণে এমনটি ঘটছে। গত শনিবার ক্ষমতাসীন দলের জনৈক উর্ধ্বতন ব্যক্তি এবং সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ও ডলার সংকটে দেশের ব্যবসায়িরা কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্যান্য দেশেও হচ্ছে। যেহেতু স্বল্প সময়ে আইএমএফফের ঋণ পাওয়া গেছে, আশা করি দুই এক মাসের মধ্যে ডলারের সংকট কেটে যাবে। লক্ষণীয় যে, এর আগেও সরকারের অনেক মন্ত্রী এভাবে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের আশ্বাসের পর প্রায় ৩/৪ মাস চলে যাওয়া সত্বেও এখনো ডলার সংকট কাটেনি। বর্ণিত উপদেষ্টা আইএমএফের ঋণের কথা বলেছেন। কিন্তু কিছু দিন আগে সরকার যখন এই ঋণ পাচ্ছে এখনো তাকে বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বাড়াতে দেখা গেছে। বিদ্যুৎ সংকট শিগগির কেটে যাবে বলে ইতোপূর্বে একাধিকবার আশ্বাস দেয়া সত্বেও সংকট কাটেনি। আগামি কয়েক মাসে এই সংকট আরো তীব্র হওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে। তাই ডলার সংকট কেটে যাওয়া নিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এমন আশ্বাসের ব্যবসায়ী আমদানিকারকরা আশ্বাস্ত হতে পারছেন না। বরং আমদানিসহ অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তারা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার দুর্ভাবনা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আর সাধারণ মানুষ রমজানসহ আগামী মাসগুলোতে নিত্যপণ্যের দাবদাহ সহ্য করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।