রমজানের আগে যা করণীয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২৩, ১২:৩০:১১ অপরাহ্ন
বছর জুড়েই যখন নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সীমিত আয়ের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝেও যুগপৎ ক্ষোভ ও হাহাকার চলছে, তখন রমজানকে সামনে রেখে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর অস্বাভাবিক মুনাফার চেষ্টা পরিস্থিতিকে আরো শোচনীয় করে তুলতে পারে, এমন আশংকা সচেতন মহলের। তাদের মতে, এখন থেকেই এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে। লক্ষণীয় যে, দুয়ারে কড়া নাড়ছে রমজান মাস। এরই মধ্যে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্যের বিশেষভাবে রমজানে বেশী ব্যবহৃত হয় এমন সব পণ্যের দাম আরো বাড়তে শুরু করেছে। এ যেনো গোদের ওপর বিষফোঁড়া। শেষ পর্যন্ত এই মূল্যস্ফীতি কোথায় নিয়ে যায়, তা নিয়েই এখন দরিদ্র ও নি¤œবিত্ত মানুষের যতো দুশ্চিন্তা। দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে খেজুর ও ছোলাসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। আর আগেই যেসব পণ্যের দাম বেড়েছিলো, সেগুলোর দাম কমেনি। গত এক মাসে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। অথচ মাস খানেক আগে প্রতি কেজিতে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।
এছাড়া গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে তেল চিনি মিলছে না। বেঁধে দেয়া দামে প্রতি লিটার খোলা পাম তেল ১১৭ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও খুচরো পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। একইভাবে সরকার নির্ধারিত প্রতি লিটার খোলা সোয়াবিন তেল ১৬৭ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়। খোলা চিনির ক্ষেত্রে নির্ধারিত দাম ১০৭ টাকা হলেও এখনো খুচরো পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মশলার বাজারে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বেড়েছে। আদা-রসুন আগে থেকেই বেড়ে আছে। একইভাবে মুরগী ও ডিমের দাম চড়া। বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। খাসির মাংসেও একই উত্তাপ। এদিকে আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ সঠিকভাবে পেলে কোন পণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। গত ২৬ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর টিসিবি অডিটোরিয়ামে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে অংশীজন এবং ঢাকা সিটির অধীন সব বাজারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এ আশ্বাস প্রদান করেন।
এদিকে রমজানে বাজার মনিটরিংয়ে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। মার্কেট, শপিং মল ও দোকানে সব ধরনের পণ্য ক্রয়ের পাকা রশিদ সংগ্রহে রাখা, পণ্যের মূল্য তালিকা হালনাগাদের তাগিদ দিয়ে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃত্রিম সংকট তৈরী থেকে বিরত থাকা, মজুতদারি না করা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এসব বিষয় তদারকিতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম জেলায় ৪০ টি মনিটরিং টিম গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের এ ধরনের ঘোষণা সাধারণ মানুষের মাঝেও অনেকখানি স্বস্তি এনে দিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা জেলা প্রশাসন চাইলে বেসামাল বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে এবং অতি মুনাফাখোরী থেকে রক্ষা করতে পারে। অনেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অনুসরণে সিলেটসহ সকল জেলায় এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিযেছেন প্রশাসনের প্রতি। রমজান আসতে দু’সপ্তাহেরও কম সময় বাকী। কিন্তু এখন থেকেই কিছু মানুষের মাঝে রমজানের পণ্যসহ কিছু নিত্যপণ্য কেনার হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টি নেতিবাচক। এতে ব্যক্তিবিশেষের কিছুটা লাভ হলেও সামগ্রিকভাবে জনগণের জন্য ক্ষতিকর। সবাই যদি এখন থেকেই এক সাথে পুরো এক মাসের নিত্য ব্যবহার্য পণ্য ক্রয় করে রাখার চেষ্টা করেন, তবে বাজারে এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি সহ সরবরাহে টান পড়ার সমূহ আশংকা। এ ধরনের প্রবণতা পরিহার করা উচিত। আমরা মনে করি, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী এমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয় কোন ধর্মপ্রাণ ও বিবেকবান মানুষের। এতে রমজানে পূণ্যলাভের পরিবর্তে গোনাহ বা পাপ হওয়ার শংকা রয়েছে। এছাড়া ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বাজারে না ছাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা। ইতোমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীও এদিকে সকল স্তরের জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আমরা রমজানের আগেই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অশুভ তৎপরতা নিয়ন্ত্রণসহ বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনসহ আইন শৃঙ্খলাকারী সকল সংস্থার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আর এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সচেতন মহল ও মিডিয়াসহ সকল শ্রেণীর মানুষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।