ই-সিগারেটে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৫:২২ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ই-সিগারেটের প্রচারণায় তামাক কোম্পানী, বিক্রি বেড়েছে ৭৮ শতাংশ’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আমদানীর অনুমতি না থাকলেও দেশে ইলেক্ট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেটের (ভ্যাপিং ডিভাইস বা ভ্যাপ পেন) ব্যবহার আশংকাজনক হারে বাড়ছে। দেশে ই-সিগারেটের বাজার সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীগুলো নানা কৌশল ব্যবহার করছে। গত ৫ বছরে দেশে ই-সিগারেট বিক্রি বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ সালের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) ধারণা, সংখ্যাটি ইতোমধ্যে আরও অনেক বেড়েছে। ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক যুবক। দেখা গেছে, দেশে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি শুরু হয়েছে মূলত: ২০১৬ সাল থেকেই। গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে ই-সিগারেট আসার প্রথম ৫ বছরে যে পরিমাণ দোকান চালু হয়েছিলো তারপরের ৫ বছরে প্রায় ৪ গুণ ই-সিগারেট বিক্রির নতুন দোকান চালু হয়েছে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী (বিএটি) ছাড়াও বড় বড় তামাক কোম্পানীগুলো ই-সিগারেট বাজারজাত ও প্রচারণায় রয়েছে। ই-সিগারেটের পক্ষে এই কোম্পানীগুলোর প্রচারণা বন্ধ না হলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এমন অভিমত সচেতন মহলের।
তামাক বিরোধী সংগঠনসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও চিকিৎসকরা বলেছেন, বাংলাদেশে ই-সিগারেট ও এর বিভিন্ন উপাদান উৎপাদিত না হলেও এর আমদানী-বিপণন নিষিদ্ধ নয়। বিভিন্ন বয়সী মানুষ বিশেষভাবে তরুণরা ই-সিগারেটকে অনেকটা ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করছে। সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেটে ঝুঁকছেন অনেকে। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ভ্যাপিংয়ে আসক্ত ব্যক্তিরা। দেখা যাচ্ছে, ই-সিগারেট আগে শুধু রাজধানী কিংবা বড় বড় শহর নগরে পাওয়া যেতো। এখন তা শহর থেকে উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অনেকেই মনে করেন সিগারেটের আসক্তি থেকে দূরে রাখতে ই-সিগারেট ব্যবহার করা হয়-কথাটি ঠিক নয়। ই-সিগারেটে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সিগারেটের চেয়ে বেশী। ই-সিগারেটকে বাজারজাত ও জনপ্রিয় করতে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা তাদের গ্রাহকদের নাম রেজিস্ট্রি করছে। যারা প্রথমবারের জন্য ই-সিগারেটের ‘ভিইউএসই’ ব্র্যান্ডের একটি পণ্য কিনে, তাদের কাছ থেকে নাম ঠিকানা ই-মেইল ও ফোন নম্বর নেওয়া হয় এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জন্য তালিকায় যুক্ত করা হয়। পরে কোম্পানীর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে বিভিন্ন অফার ও ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। অনেক সময় সাড়ে ৩ হাজার টাকার একটি পণ্যে ছাড় দেয়া হয় প্রায় ১ হাজার টাকা, যা ৩০ শতাংশেরও বেশী। ই-সিগারেট সম্পর্কে অনেকের এমন ভুল ধারণা রয়েছে যে, প্রচলিত সিগারেট ছাড়তে ই-সিগারেট তাদের সাহায্য করবে।
এখানে স্মরণযোগ্য যে, প্রথম যখন ফিল্টার টিপড সিগারেট বাজারে আসে, তখন ধূমপায়ীদের ধারণা ছিলো, এই ফিল্টার সিগারেটের ক্ষতিকর পদার্থ বিশেষভাবে নিকোটিন শুঁষে নিয়ে সিগারেটের ধুঁয়াকে পরিশোধিত বা ক্ষতিবিহীন করবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফিল্টার তামাকের ক্ষতিকর উপাদান শুঁষে নিতে বা পরিশোধনে তেমন কোন ক্ষমতা রাখে না। একইভাবে ই-সিগারেটেও তামাকের ক্ষয়ক্ষতি কোন অংশেই কম নয় প্রচলিত সিগারেটের চেয়ে।
প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে আমদানির অনুমতি না থাকলেও এবং ব্যবহারের অনুমতি ছাড়াই ই-সিগারেটের অবাধ বিকিকিনি ও ব্যবহার হচ্ছে কীভাবে? গণস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে হৃদরোগের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই ই-সিগারেট কীভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে, এটা সত্যিই বিস্ময়কর। আমরা এই স্বাস্থ্য বিধ্বংসী তৎপরতা বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এর পাশাপাশি তরুণ যুবারা যাতে ই-সিগারেটসহ প্রচলিত বিড়ি সিগারেট কিংবা জর্দাসহ কোন ধরনের তামাক সামগ্রীর প্রতি আকৃষ্ট না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।