অবৈধ পার্কিংয়ে যানজট বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৫:৫৪ অপরাহ্ন
গতকাল একটি স্থানীয় দৈনিকে ‘সিলেটে অবৈধ পার্কিংয়ে যানজট, দেখবে কে?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে সিলেট মহানগরে মানুষের চলাচল বেড়েছে। কেনাকাটার জন্য বিপনী বিতানগুলোতে ভিড় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভাগীয় শহর হওয়ায় পাশের জেলা ও উপজেলা থেকেও মানুষজন ঈদের কেনাকাটা করতে আসছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অন্য সময়ের তুলনায় যানজট বেড়েছে। আর যানজটে ভুক্তভোগী মানুষের ক্ষোভ রাস্তার পাশে অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা গাড়িগুলোর চালকদের উপর।
দেখা গেছে, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, নাইওরপুল, সোবহানীঘাট, শিবগঞ্জ ও লামাবাজার এলাকায় তীব্র যানজট। বিশেষ করে জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার ও সুরমা মার্কেট এলাকার ফুটপাত বেদখল এবং রাস্তায় অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে মূলত এই যানজট। আর ফুটপাত বেদখল ও রাস্তায় অবৈধ পার্কিং নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন কঠোর পদক্ষেপ নেই। জিন্দাবাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালনকালে তাদের পাশেই দায়িত্ব পালনকালে তাদের পাশেই অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়।
অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, যানবাহনের আধিক্য, ফুটপাত বেদখল এবং অধিকাংশ বিপনী বিতানে পার্কিং না থাকার কারনে সিলেট নগরীতে বছর জুড়েই যানজট লেগে থাকে। এই যানজটকে আরো তীব্রতা করে তুলছে অবৈধ পার্কিং। বিশেষভাবে যত্রতত্র মোটরসাইকেল পার্কিং এই যানজট সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। নগরীর এমন কোন মার্কেট কিংবা বিপনী বিতান পাওয়া মুশকিল। যার সামনে এক বা একাধিক মোটরসাইকেল পার্ক করা নেই। এসব মোটরসাইকেল ফুটপাত এমনকি রাস্তার একাংশ জুড়ে পার্ক করে রাখা হয়। এছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। মার্কেট বা বিপনী বিতানের সামনে পার্ক করা মোটরসাইকেলের মধ্যে অনেকগুলোই মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের মালিক, ম্যানেজার এমনকি কর্মচারীদের। এভাবে নিজেদের মার্কেট বা দোকানের সামনে মোটরসাইকেল পার্ক করে যে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাঘাত নিজেরাই ঘটাচ্ছেন, তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। নগরীর অনেক মার্কেটের সামনে এতো বেশি সংখ্যক মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখতে দেখা যায় যে, ক্রেতা, গ্রাহক কিংবা অন্যান্য লোকজনকে সেই মার্কেটে ঢুকতে মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
যানবাহন ছাড়াও ভ্যানগাড়ির পশরাগুলোও যানজট সৃষ্টিতে বড়ো ভূমিকা রাখছে। ভাসমান ফল ও কাপড় বিক্রেতা এবং অন্যান্য গৃহস্থালি বা ব্যক্তিগত সামগ্রী বিক্রেতাদের ভ্যান ছড়িয়ে আছে গোট নগরী জুড়ে। এসব ভ্যানগাড়ি রাস্তার একাংশ দখল করে বেচা বিক্রি করে। যত্রতত্র রিকশা ও সিএনজি রেখেও যানজট সৃষ্টি করতে দেখা যাচ্ছে নগরীর বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকাগুলোতে। নগরীর অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যা-ের গাড়িগুলোও এ রাস্তার একাংশ জুড়ে দীর্ঘ সময় পার্ক করে রাখা হচ্ছে। এভাবে নগরীর যানজট যখন প্রাত্যহিক ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন ঈদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পর্বে এই দুর্ভোগ আরো অনেকগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরীতে যানজট বাড়লে অনেক যানবাহন যাত্রী নিয়ে নগরীতে ঢুকতে চায় না। আর ঢুকলেও যানজটের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করতে দেখা যায়। এটাও সাধারণ জনগণকে চলাচলে বাধাগ্রস্ত ও আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যানজটে পড়ে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপচয় হচ্ছে। কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় কর্মঘন্টা নষ্টের ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান বার বার মিডিয়ায় এসেছে। সিলেটসহ অন্যান্য জেলায়ও এমন ক্ষয়ক্ষতি কম নয়।
গত বছর প্রকাশিত বুয়েটের দুর্ঘটনা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যানজটে নষ্ট হচ্ছে ৮২ লাখ কর্মঘন্টা। যার অর্থনৈতিক ক্ষতি ১০৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এভাবে বছরে কী বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, তা ভাবতেও শংকা হয়। বর্তমানে সিলেটসহ গোট দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বেড়েছে সিএনজি অটো রিকশার সংখ্যা আর এর প্রভাব পড়ছে যানজটের ওপর। সিলেট নগরীতে এই মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ পার্কিং যে নগরীর যানজটের একটি বড়ো কারণ এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট যানবাহন মালিক ও ট্রাফিক বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা বিশ^াস করি, নগরীতে যানবাহনের অবৈধ পার্কিং দূর করা গেলে যানজট অর্ধেক কমে আসবে।