খাদ্য নিরাপত্তায় আসছে কঠোর আইন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৫:২৮ অপরাহ্ন
খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনে আইন ভঙ্গ করলে বা অনিয়ম করলে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেবে সরকার। এ রকম বিধান রেখে নতুন একটি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, অধিক মুনাফার আশায় অবৈধ খাদ্য মজুদ করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনে বাজারে অনিরাপদ বা ভেজাল খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করলে দুই বছর থেকে অনুর্ধ ৫ বছর কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। এই আইন কেউ লংঘন করলে তার শাস্তি হবে ভ্রাম্যমাণ এবং নিরাপদ খাদ্য আদালতে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, খাদ্যদ্রব্যে অস্বাভাবিক কোনো কিছু মেশানো, কৃত্রিম সংকটের মজুদ করা, বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কম দেয়া হলে সব অপরাধের জন্য একই শাস্তি দেয়া হবে। গত বছর ১৯ এপ্রিল আইনটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করলে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি আগের দুটি আইনের সমন্বয় করে করা হয়েছে। আইনে ২০টি ধারা রয়েছে।
লক্ষণীয় যে, নিরাপদ খাদ্য নিয়ে অতীতে দেশের জনগণকে খুব একটা চিন্তা করতে হতো না। কারণ ব্যবসায়ীরা নৈতিকতা, নীতিজ্ঞান ও মূল্যবোধে উজ্জীবিত ছিলেন। লোভের বশবর্তী হয়ে বেআইনী ও অবৈধভাবে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশা করতেন না। বিগত ২/৩ দশকের আগে পরে এদেশের একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর মধ্যে অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতা দেখা যায়। যেমন-কাপড়ের রং খাদ্য বা পানীয়তে ব্যবহার, মাছ ও ফল দ্রুত না পঁচতে রাসায়নিকের ব্যবহার, দামী চালে পাথর ও মশলায় ইটের গুড়া ইত্যাদির ব্যবহার। এর আগে এদেশে খুব অল্প খাদ্যপণ্যে ভেজাল মেশানোর ইতিহাস আছে। তখন মধুতে চিনির রস এবং ঘি-তে পচা বা মজানো কলা এবং সর্ষের তেলে অন্যান্য সস্তা জাতীয় তেল ইত্যাদির ব্যবহার ছিল ব্যাপক। তবে তখনকার সময় কোন খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নক পদার্থ বা এ ধরনের কোন ক্ষতিকর পদার্থ মেশানোর কথা কখনো চিন্তাও করতো না ব্যবসায়ীরা। বিবেক ও মূল্যবোধের সিংহভাগই ছিলো তাদের মাঝে।
যা-ই হোক, গত ২/৩ যুগে ক্রমশঃ ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা বহুলাংশে বিলীন হয়ে গেছে। এখন কলা ও আনারস পাকানোর জন্য বিষাক্ত কারবাইড এবং আমকে পচন থেকে রক্ষার জন্য ক্ষতিকর ফরমালিন ব্যবহারেও কুণ্ঠিত নয় এসব বিবেক ও মূল্যবোধ বিবর্জিত মুনাফালোভী ব্যবসায়ী। তাই স্বাভাবিকভাবেই খাদ্যপণ্য নিরাপদ রাখতে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রস্তাবিত খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনে শাস্তির যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তা যথেষ্ট কঠোর।
এই আইন পাশের পর যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তবে এদেশ থেকে খাদ্যে ভেজাল ও অনিয়ম দূর হতে বেশী দিন লাগবে না বলে আমরা মনে করি। তবে এখানে যে বিষয়টি সবচেয়ে বিপজ্জনক ও উদ্বেগের সেটা হচ্ছে, এই কঠোর আইনের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের বিষয়টি। আর অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের কারণে নিরপরাধ ও নিরীহ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। সাম্প্রতিককালে এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকাসহ আরো কিছু শহরে। এমনকি কোন কোন স্থানে ক্ষিপ্ত ব্যবসায়ীদের হাতে নাজেহাল হতে দেখা গেছে ভেজাল ও অনিয়ম বিরোধী ভ্রাম্যমান আদালতকে। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সকল সচেতন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।