বিদেশী পত্রিকায় বাংলাদেশের তাপদাহ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মে ২০২৩, ১২:৩০:৫০ অপরাহ্ন
সৌদি আরবের প্রভাবশালী ইংরেজি পত্রিকা ‘আরব নিউজ’ গতকাল বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘রেকর্ড হিট থ্রেটেন্স হেলথ্, ফুড সিকিউরিটি অব বাংলাদেশিজ’ (রেকর্ড তাপমাত্রা বাংলাদেশি জনগণের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে) শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসে গত ৬০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস পাবার আশংকা রয়েছে। এছাড়া তীব্র তাপমাত্রা জনস্বাস্থ্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার আংশকা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে প্রবহমান তাপদাহ জলবায়ুর কাছে অরক্ষিত দেশটি গরমের কবলে পড়েছে। মাসের শুরু থেকেই অধিকাংশ অঞ্চলে গরমের তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বাসিন্দারা ঘর্মাক্ত। চলতি বছরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ায় প্রচন্ড গরম অনুভুত হচ্ছে। গত ১৬ এপ্রিল ঢাকায় ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা গত ৬ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বৈশি^ক উষ্ণতার প্রেক্ষাপটে এ ধরণের রেকর্ড ভঙ্গকারী তাপমাত্রা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান আরব নিউজকে বলেন, আমরা এটা বলতে পারি না যে, তাপদাহের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপদাহের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ঢাকার তাপমাত্রা ছিলো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অথচ গত বছর একই সময়ে তা ছিলো ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি আরো বলেন, ১৯৬৫ সালে ঢাকায় সর্বোচ্চ ৪০.০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ২০১৪ সালে তা ছিলো ৪০.৩ ডিগ্রি। আর এ বছর রেকর্ড করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪০.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহের স্থায়িত্ব ও দীর্ঘ হতে দেখা যাচ্ছে। এটা ৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৬ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। বিষয়টি অস্বাভাবিক। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আগামী দিনগুলোতে আরেকটি তাপদাহ আসার আশংকা রয়েছে।
চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া বাংলাদেশের জন্য বিপদ ডেকে আনছে, প্রচন্ড গরমের দরুন গরমে অস্থিরতা ও হিট স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে বাড়ছে অন্যান্য রোগব্যাধি। গত বছরের তুলনায় এ বছর হিট স্ট্রোকে আক্রান্তের খবর বেশি পাওয়া গেছে। তাপদাহের সময় কলেরা ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবও ঘটেছে। প্রলম্বিত তাপদাহ ও বৃষ্টি স্বল্পতার মধ্যে চলতি বছরের শস্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকাস্থ ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম এ রহিম বলেন, তীব্র গরমের কারনে বিভিন্ন ফল পাকার আগেই গাছ থেকে ঝরে যাচ্ছে এবং অনেক ফলের গাছে পরাগায়নে বিঘœ ঘটছে। পরাগায়নে সহায়ক মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ প্রচন্ড গরম সহ্য করতে পারছে না। এ ধরনের চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া দেশের ধান ফসলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে এবং এই শস্যের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া গরমের কারণে কৃষকেরা মাঠে কাজ করতে পারছে না।
এম এ রহিম আরো বলেন, তাপ প্রবাহ ধান উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা আমাদের প্রধান খাদ্য শস্য। এ অবস্থায় ধানের উৎপাদন ৪০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। বিভিন্নভাবে তাপপ্রবাহ দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। লক্ষনীয় যে, বৈশি^ক উষ্ণতা বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। প্রধান খাদ্য শস্য ধান উৎপাদনেও এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক স্থানে মাঠের ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরম ও বৃষ্টির স্বল্পতার দরুন অতিরিক্ত পানি সেচের প্রয়োজন হবে। এতে বেড়ে যাবে উৎপাদন ব্যয়, বৃদ্ধি পাবে খাদ্য শস্যের দাম। যার পরিনতি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। এছাড়া প্রচন্ড গরমে নানা রোগ ব্যাধির প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন করতে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তন তথা প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, নিতে হবে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, অন্যথায় আগামিতে আমাদের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি দেখা দিতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্য সংকট। আমরা এ দিকে সরকারের স্বাস্থ্য ও খাদ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষন করছি।