র্যাগিং প্রতিরোধে নীতিমালা জারি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মে ২০২৩, ১২:০৫:৩২ অপরাহ্ন
সম্প্রতি সরকার ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ জারি করেছে। গত ২ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে এ তথ্য জানানো হয়।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, এই নীতিমালা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩ নামে অভিহিত হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি করতে হবে। কোন শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী এমনকি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে র্যাগিং বা বুলিংয়ে জড়িত হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনে র্যাগিংয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং এবং র্যাগিং হয় এরূপ কোন কার্যকলাপ, সমাবেশ বা অনুষ্ঠান করা যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেসব জায়গায় বুলিং ও র্যাগিং হওয়ার আশংকা থাকে, সেসব জায়গায় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করবে। এছাড়া সবাইকে সচেতন করতে শিক্ষাবর্ষের শুরুতে একদিন বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ দিবস’ পালন করাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা রয়েছে এই সার্কুলারে।
শিক্ষাঙ্গন তথা ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে উল্লেখিত নীতিমালা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। লক্ষণীয় যে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে পুরোনো শিক্ষার্থীদের সখ্য গড়ে তোলার জন্য যে পরিচিতি প্রথা এদেশে সেটাকে র্যাগিং বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আদব কায়দা ও নিয়ম-কানুন শেখানোর নামে তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
ক’বছর আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হয়। এ নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে সচেতন মহলে। শাবিতে ৬ জন নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের নামে অর্ধনগ্ন করে শৌচাগারে সেলফি তুলতে বাধ্য করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নবীন শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ে জড়িত কথিত বড়ো ভাইয়ের হাতে এতোই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো যে, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলো সে, চিনতে পারছিলো না কাউকে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ক্ষেত্রে, যা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিলো। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের নামে যখন এমন সব কর্মকান্ড অব্যাহত, তখন বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে সরকারের এই নীতিমালা নিঃসন্দেহে একটি শুভ ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটা বাস্তবায়িত হলে ক্যাম্পাসে অনেক অপকর্ম ও অপরাধ হ্রাস পাবে, এমনটি প্রত্যাশা করা যায়।
দেখা যায়, বুলিং ও র্যাগিং অনেক সময় যৌন নির্যাতনের পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়। নারী শিক্ষার্থীদের নগ্ন ছবি পর্যন্ত মোবাইলে ধারণ করতে দেখা যায় ছাত্র নামধারী র্যাগিংয়ের সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের। অনেক সময় ছাত্র সংগঠন বিশেষভাবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ ধরনের অছাত্রসুলভহীন তৎপরতার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। এতে এমন অপকর্ম প্রতিহত করা কঠিন হয়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন এমনকি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষগুলোর পক্ষে।
বলা যায়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার শেষ পর্যন্ত একটি ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে র্যাগিং ও বুলিং প্রতিরোধমূলক নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে। এর যথাযথ বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ বহুলাংশে উন্নত হবে, শৃংখলা ফিরে আসবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে, এমনটি আশা করা যায়। আর নবীন শিক্ষার্থীদেরও র্যাগিংয়ের ভয়ভীতি নিয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে না। আমরা এর বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করি।