বহুমুখী চাপে অর্থনীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মে ২০২৩, ৩:২৮:১০ অপরাহ্ন
গত ৭ মে দেশের অন্যতম ইংরেজী দৈনিক নিউএইজ-এ বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশকে বৈদেশিক ঋণের জন্য সুদ হিসেবে ৯ হাজার ৩২২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। শুধু ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমার কারণে অতিরিক্ত ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে। গত অর্থ বছর সুদের পরিমাণ ছিলো ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। আগামী ২০২৪ অর্থ বছরে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু উচ্চ আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে রিজার্ভে মারাত্মক টান পড়েছে। ডলারের সরকার নির্ধারিত মূল্য কার্ব বা সেকেন্ডারি মার্কেটের চেয়ে অনেক কম থাকায় সরকারী চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা অনেক কমে গেছে, বেড়েছে হুন্ডি ব্যবসা। এ অবস্থায় ডলারের দাম আরো বাড়ানো এমনকি কার্ব মার্কেটের সমপর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য অর্থনীতিবিদ ও সচেতন মহল থেকে দাবি ওঠেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, রেমিট্যান্সে হ্রাস, মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে এদেশের অর্থনীতিতে এক বিপর্যয়কর অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর শেষে আইএমএফ এর মিশন প্রধান বলেছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ, বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা এবং প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর অর্থনীতির ধীরগতি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ এবং টাকার মানের ওপর প্রভাব ফেলবে। আগামী অর্থবছর বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে যেমন চলতি বছরের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ বেশী অর্থ পরিশোধ করতে হবে, তেমনি টাকার আরো অবমূল্যায়ন হলে এই অংক অনেক বেড়ে যাবে। এতে দেশের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে আরো বেশী চাপে পড়বে।
দেশী বিদেশী বিভিন্ন ধরনের আর্থিক চাপ মোকাবেলায় সরকার আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ থেকে আরো ঋণ গ্রহণের চেষ্টা করছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের সুবিধা ও অসুবিধা বিশেষভাবে আর্থিক দুর্গতির দিকে আদৌ নজর দিচ্ছে না বা দিতে পারছে না সরকার। আইএমএফ এর ঋণ পাবার শর্ত হিসেবে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর থেকে ভর্তুকি হ্রাস করতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে সাধারণ জনগণের আর্থিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। একই অবস্থা গ্যাস ও জ্বালানী তেলের ক্ষেত্রে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানী তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে কমার কোন লক্ষণ নেই। খাদ্যপণ্য সহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে একই অবস্থা লক্ষণীয়। ফলে রীতিমতো হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে সীমিত আয়ের মানুষের মাঝে। ধারকর্জ করে চলছেন অনেকে। অনেকে এতোদিন সঞ্চয় ভেঙ্গে চলেছেন, এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। নিম্নবিত্তসহ মধ্যবিত্তদের অনেকে গৃহস্থালীর ব্যয় সংকোচন করতে করতে শেষ সীমায় পৌঁছে গেছেন। এ হচ্ছে দৃশ্যমান অবস্থা। এর পেছনে সরকারের ওপর সৃষ্ট দেশী বিদেশী অর্থনৈতিক চাপ জনগণের আর্থিক অবস্থার ওপর ক্রমবর্ধমান সংকট সৃষ্টির শংকাই প্রবল হয়ে ওঠেছে। যেহেতু দেশে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। তাই সরকার মনে প্রাণে চাইবে ও চেষ্টা করবে জনগণের আর্থিক সংকট বা চাপ হ্রাস করতে। কিন্তু বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক যখন নিম্নগামী, তখন এতে সরকার কতোটুকু সফল হবে, এ আশংকা থেকেই যাচ্ছে। আর নির্বাচন শেষে বিশাল বৈদেশিক ঋণের দায় মেটানোসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সংকট দুরীকরণে পরবর্তী সরকারের ওপর যে দায়িত্ব বর্তাবে, তা তারা আদৌ পালন করতে পারবে কি-না, এ সন্দেহ ক্রমশ: বৃদ্ধি পাচ্ছে জনমনে।