বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মে ২০২৩, ১২:৩০:৫৬ অপরাহ্ন
বিষয়টি চিকিৎসা ও গণস্বাস্থ্য সংক্রান্ত হলেও অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৪ জনে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক। চিকিৎসকদের মতে, থ্যালাসেমিয়া হলো একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এসব রোগী ছোট বয়স থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভুগে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য অন্যের রক্তদানের উপর নির্ভর করতে হয়।
এদেশে থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। তাই দুই বাহকের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন জরুরী। অন্যথায় থ্যালাসেমিয়া একটি জাতিকে অনেকাংশে পঙ্গু বা স্থবির করে দিতে পারে, এমন অভিমত সচেতন মহলের।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষের মাঝে এমন কিছু রোগব্যাধি আছে, যেগুলো সংক্রামক বা জীবাণুঘটিত নয় এমনকি সাধারণ শারীরিক বিশৃংখলা বা অনিয়ম থেকেও সৃষ্ট নয়। এগুলো হচ্ছে বংশগত বা জেনেটিক রোগ। আমরা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট জটিল সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে না গিয়ে মোটা দাগে আলোচনা করবো এ বিষয়ে। বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ নেই বললেই চলে। যেসব অসুখ ওষুধ দিলে সারে এবং যেসব ক্ষেত্রে কাটাছেঁড়া করে সারিয়ে তোলা যায়, সেসবই করা হয় হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা চিকিৎসকদের চেম্বারে। কিন্তু বংশগত বা জেনেটিক রোগ নিয়ে এদেশে এ পর্যন্ত কোন উল্লেখযোগ্য গবেষণা কিংবা এ বিষয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার-উদ্ভাবন হয়েছে বলে শোনা যায়নি। যা হয়েছে, এর প্রায় সবই পশ্চিমা দেশগুলোতে। তাই এসব বংশগত বা জেনেটিক রোগ মোকাবেলায় এদেশের চিকিৎসকদের নির্ভর করতে হয় বিদেশী চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জামের উপর।
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এমনকি স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের নেপথ্যে রয়েছে বংশগত অর্থাৎ জেনেটিক বিষয়। বাংলাদেশে এসব রোগের লাখ লাখ নয় কোটি রোগী থাকা সত্বেও এসব রোগ নিয়ে এ পর্যন্ত কী বা কতোটুকু গবেষণা হয়েছে এদেশের চিকিৎসা মহা বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, এ প্রশ্ন এদেশের সচেতন মানুষের মনে জাগতেই পারে। এমনকি প্রশ্ন জাগতে পারে রোগী ও তার ভুক্তভোগী স্বজনদেরও। এসব জেনেটিক রোগ মোকাবেলায় যেসব ওষুধ ও সরঞ্জাম প্রয়োজন, সেগুলোর কতোটুকু এদেশে উৎপাদন করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নও অবান্তর নয়।
এদেশে হার্টের সমস্যায় রিং বা স্টেন্ট বসানোর চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু এই রিংয়ের দাম কেনো এতো বেশী, এটাও রোগী ও ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন। এছাড়া হার্ট ফেইলিওর রোগীদের জন্য যে পেসমেকার জাতীয় যন্ত্র প্রয়োজন, তা-ও এতো ব্যয়বহুল কেনো, এমন প্রশ্নও অনেকের। এতো রোগীদের দেশে এগুলো কেনো দেশীয়ভাবে প্রস্তুত করা বা করার চেষ্টা করা হচ্ছে না, এ রহস্য অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এসব নিয়ে অসাধু ব্যবসার অভিযোগও তাই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। দেখা গেছে, একটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল তৈরীতে বা আমদানিতে ১০/১৫ টাকা ব্যয় হলেও এদেশের মার্কেটে তা বিক্রি হচ্ছে পঞ্চাশ থেকে শত টাকায়। হার্টের একটি রিং বিদেশ থেকে ৫ হাজার টাকায় কেনা হলেও এখানে বিক্রি হচ্ছে ১৫/২০ হাজার এমনকি এর চেয়ে বেশী টাকায়।
অসুস্থ হলে অনেক সাহসী মানুষও অসহায় ও দিশেহারা হয়ে পড়েন, অনেক বুদ্ধিমান লোকও নির্বোধের মতো আচরণ করেন। তাই তাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে একটি দেশের চিকিৎসা খাত অস্বাভাবিক মুনাফাখোরীকে প্রশ্রয় দেবে এটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা থ্যালাসেমিয়া, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো জেনেটিক রোগ মোকাবেলায় গবেষণাসহ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি সরকারের। অন্যথায়, এসব রোগব্যাধি একসময় জাতির প্রাণশক্তিকে অনেকাংশে স্থবির ও নির্জীব করে দিতে পারে।