স্বজনকে কাঁদাচ্ছে মোটর বাইক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০২৩, ১২:১৫:৫২ অপরাহ্ন
সিলেট নগরীর জেলরোড এলাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনার ভিডিও ফেইসবুকে প্রচারিত হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক। এতে দেখা গেছে, কেমন বেপরোয়াভাবে তিনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার এই যে, ইদানিং কিছু তরুণ-যুবককে ব্যস্ত সড়কে অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা যায়। তারা হেলমেট পরার বিষয়ে বেখেয়াল ফলে প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণ হারাচ্ছে মোটরসাইকেল আরোহীরা।
গত বছরের শেষ দিকে প্রকাশিত রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন এর তথ্য অনুসারে, ১০ মাসে দেশে ২ হাজার ৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এতে নিহত হন ২ হাজার ৯৭ জন। দেশে কয়েক বছর ধরেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর ঘটনা বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে ২ হাজারেরও বেশী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন ২ হাজার ৯৭ জন। এর আগের বছরের এক সময়ের তুলনায় দুর্ঘটনায় ২১ শতাংশ বেশী এবং প্রাণহানি ১৯ শতাংশ বেড়েছে। রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন এর মতে, বেপরোয়াভাবে কিশোর যুবকদের মোটরসাইকেল চালানো, মোটরসাইকেল চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, ট্রাফিক আইন ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির ক্ষেত্রে শিথিলতা এবং সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা অন্যতম।
ঐ বছর মে মাসে পরিচালিত এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হওয়া যতো মানুষ সেবা নেন, এর ৬৫ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। ঐ মাসের প্রথম ৭ দিনে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ৪৭৪ জন পঙ্গু হাসপাতালে সেবা নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে শতাংশই ছিলেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কেউ হাত বা পা ভাঙ্গলে সুস্থ হতে ৩ থেকে ৯ মাস সময় লাগছে।
দেখা গেছে, দেশে নিবন্ধিত মোটরযানের ৭১ শতাংশই মোটর সাইকেল শুধু রাজধানীতেই চলছে যার পরিমাণ ১৫ লাখেরও বেশী । ২০২২ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর।
ঐ বছর ঈদের ছুটির সময় সড়কে যতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাদের প্রায় ৪৮ শতাংশই মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী। উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত অত্যন্ত শংকা সৃষ্টিকারী। বলা যায়, দেশে মোটর সাইকেল চালানোকে শৃংখলার মধ্যে আনতে পারলে প্রায় অর্ধেক সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়কে মৃত্যু কমানো সম্ভব।< সচেতন মহলের মতে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন সচেতনতা। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর ফলে চালক কেবল নিজেকেই ঝুঁকিতে ফেলেন না, একই সঙ্গে পথচারীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কাজেই চালক নিজে এ ব্যাপারে সচেতন হলে দুর্ঘটনা রোধ হতে পারে। কথায় আছে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশী। জীবন বাঁচলে মোটরসাইকেল চালনা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে নিজের বাহাদুরী বা কৃতিত্ব দেখানোর সুযোগ থাকবে। তাই মোটরসাইকেল চালানোর সময় সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সড়ক মহাসড়কে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেইন তৈরী করতে পারলে এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।