অনন্য তুরস্ক, অসাধারণ এরদোগান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০২৩, ১২:৩৫:০৬ অপরাহ্ন
তুরস্কের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ৪৯.৪৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল পেয়েছেন ৪৪.৭৯ শতাংশ ভোট। তবে এরদোগান বেশী ভোট পেলেও নিয়ম অনুযায়ী ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দুই সপ্তাহের মধ্যে এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যেদ্বিতীয় দফা নির্বাচন হওয়ার কথা। খুবই সামান্য অর্থাৎ মাত্র দশমিক ৫১
শতাংশ ভোট পেলে এরদোগান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষিত হতেন।
অনেকের মতে, তৃতীয় বিশ্বের কোন নড়বড়ে গণতন্ত্রের দেশ হলে ক্ষমতাসীন মহল ছলে বলে কৌশলে কিংবা ক্ষমতার বলে এই সামান্য ভোট বাগিয়ে ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতো। কিন্তু সৎ শাসকের দেশ তুরস্কে এমনটি করার কথা কেউ ভাবেনি। গণতন্ত্রের দেশ তুরস্কে এটা সম্ভবও নয়। যে সততা ও দেশপ্রেমের জন্য এরদোগান নিজ দেশে এমনকি গোটা মুসলিম বিশ্বে প্রশংসিত ও অনুসরণীয়, তিনি ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন অসৎ ও কদর্য পন্থা অবলম্বন করবেন, এটা তার নিজ দেশের জনগণের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের সচেতন মুসলমানরাও ভাবতে পারেন না। এরদোগানের এই গুনাবলীই তাকে এমন অবিসংবাদিত নেতা করেছে, এনে দিয়েছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। কিন্তু ভালো মানুষ বা ভালো শাসক হলেই যে তিনি অজাতশত্রু হবেন, এমন নয়। বিশ্বে এরদোগানের বিরোধী মানুষ ও শত্রুর অভাব নেই। এতো ধর্মীয় সহিষ্ণুতার অনুশীলন সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের অধিকাংশ দেশের শাসক এরদোগানকে পছন্দ করেন না, মুসলিম জাতির প্রতি তার আন্তরিক ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সমর্থনের জন্য। যখনই ইউরোপ এশিয়া কিংবা বিশ্বের কোন প্রান্তে মুসলিমরা নির্যাতন ও নিপীড়নের মধ্যে পড়ে কিংবা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাদের প্রতি অন্যায় অবিচার করে, তখনই এর প্রতিবাদ করতে দেখা যায় এরদোগানকে। গোটা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর অধিকাংশ শাসক এ সময় নীরব ও নির্বিকার থাকলেও গে ওঠেন এরদোগান। গত দুই দশকে বহুবার এসব অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করেছেন তিনি। নবী (সাঃ) এর অবমাননা থেকে শুরু করে ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গা ও কাশ্মীরীদের ওপর নির্যাতন, ফিলিস্তিনীদের ওপর ইসরাইলী বর্বরতা এবং মিয়ানমারে অসহায় রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা এবং ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। শুধু প্রতিবাদ জানিয়েই ক্ষান্ত হননি, এসব নিরীহ ও অসহায় মানুষকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করেছেন তিনি। এভাবে এরদোগান হয়ে ওঠেছেন বর্তমান মুসলিম বিশ্বের এক অবিসংবাদিত নেতা।
অনেকের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অধিকাংশ শাসক এরদোগানকে সহ্য করতে পারেন না, মানতে রাজী নন তার অনুসৃত নীতি। আসলে ইসলাম বিদ্বেষ এবং অকারণ ইসলাম ভীতি (ইসলামোফোবিয়া) থেকেই তারা এটা করে থাকেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষভাবে যুক্তরাজ্য ও জার্মানীতে বিপুল সংখ্যক তুর্কী মুসলমানের বাস। তারা এরদোগানকে ভালোবাসে, সমর্থন করে। এটাও ভালো চোখে দেখেন না এসব খৃষ্টান বিধর্মী শাসকেরা। এ ধরনের বিদ্বেষ থেকে কয়েক বছর আগে এরদোগানকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দেশপ্রেমিক তুর্কী জনগণের ত্বরিৎ পদক্ষেপ এবং কঠিন প্রাচীরতম প্রতিরোধের ফলে সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিরোধী গুলেনকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সেই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এভাবে প্রাণে রক্ষা পান এরদোগান, রক্ষা পায় তুরস্কের মুসলিম জনগণ। অন্যথায় তার পরিণতি হতো মিশরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইসলামপন্থী নেতা মোহাম্মদ মুরসির মতো, এমন অভিমত সচেতন মহল
ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। অভিযোগ রয়েছে, এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র ও সহযোগী পশ্চিমা দেশগুলো তুরস্কে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলেছে এরদোগানকে পরাজিত করতে। গোটা দেশব্যাপী এরদোগান বিরোধী প্রতিটি সংস্থা, সংগঠন ও প্লাটফর্ম তারা ব্যবহার করেছে। ব্যবহার করেছে খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনকে। কিন্তু সফল হয়নি তুর্কী মুসলমানদের ঈমানী শক্তি, দেশপ্রেম ও এরদোগানের প্রতি তাদের অবিচল আস্থার কারণে। আর তুরস্কের সেনাবাহিনী মিশর ও পাকিস্তানের মতো লোভী, স্বার্থান্বেষী ও নিমকহারাম না হওয়ায় পশ্চিমারা ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে ঘরের শত্রু বিভীষণ হিসেবে ব্যবহার করতে।