সীমিত আয়ের জনগণের কী হবে?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মে ২০২৩, ১২:৩০:২৩ অপরাহ্ন
দেশে সরকারী চাকুরীজীবীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। তবে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। সম্প্রতি সরকারের শীর্ষমহল তাদের বেতনবৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সেক্ষেত্রে কতটুকু সুযোগ দেওয়া যায় সেই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। প্রতি বছরের হিসাব মতে, মূল্যস্ফীতি যতো বাড়বে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বাড়ানো হবে। এছাড়া বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে ফ্লাট কেনার ঋণ, গাড়ি, কেনার ঋণসহ অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত ৫ বছর পর পর নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করে সরকার। ২০০৯ সালে সপ্তম পে-স্কেল কার্যকর করার পর ২০১৫ সালে প্রায় শতভাগ বেতন বাড়িয়ে নতুন পে-স্কেল কার্যকর করে সরকার। তারপর থেকে প্রতি বছর জুলাই মাসে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন চাকুরীজীবীরা। এরপর ৮ বছর কেটে গেছে এবং ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্যসহ পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, এ কথা উল্লেখ করে সরকারী চাকুরীজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন নতুন নতুন পে-স্কেলের দাবি তুলছে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবির পেছনে যুক্তি রয়েছে। কারণ গত এক বছরে দেশে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। বেড়েছে খাদ্যপণ্যসহ প্রায় প্রতিটি পণ্য ও সেবার দাম। তাই সরকারও তাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির ব্যাপারে তৎপর ও সচেতন। কিন্তু এখানে একটি বিষয় অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক যে, সরকার সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আর্থিক সংকট দুরীকরণে যতোটা আগ্রহী ও আন্তরিক, এর সিকিভাগ আন্তরিকতা ও পরিলক্ষিত হচ্ছেনা দেশের কয়েক কোটি বেসরকারী চাকুরীজীবীসহ প্রায় ১৬/১৭ কোটি সাধারণ জনগণের প্রতি। যদিও বলা হচ্ছে, জনগণই সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের মূল শক্তি, কিন্তু বাস্তবে চরম অবহেলিত দেশের এই সিংহভাগ মানুষ। উপর্যুপরি ভয়াবহ পণ্যমূল্য বৃদ্ধি তথা মূল্যস্ফীতি ঘটলেও এই সাধারণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক কষ্ট ও দুর্ভোগ লাঘবে সরকারকে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে যেমন দেখা যায়নি নিকট অতীতে, তেমনি দেখা যাচ্ছে না বর্তমান সময়েও। বিগত করোনার সময় অফিস আদালত ও সরকারী স্কুল কলেজসমূহ বন্ধ থাকলেও সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও শিক্ষক শিক্ষিকারা ঘরে বসে মাসের পর মাস বেতন-ভাতা পান। অথচ সে সময়ে দেশের কয়েক কোটি মানুষ চাকুরীচ্যুত হয়, কর্মসংস্থান হারায়। অনেকের আয় কমে যায়, অনেকে সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাধ্য হয় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে। এসব ব্যবসার মালিক ও কর্মচারীরা ব্যবসা ও কর্মসংস্থান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র জাতিসংঘের হিসাবে, এ সময় প্রায় দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ে। কিন্তু এই কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান কিংবা আর্থিক দুর্ভোগ লাঘবে সরকারকে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের জনগণের করোনাকালীন সময়ে আর্থিক দুর্ভোগ লাঘবে নানা ধরনের স্কীম হাতে নিলেও এবং বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করলেও বাংলাদেশ সরকারকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে কিছু অর্থ সহায়তা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হলেও দেশের সিংহভাগ মানুষের দুর্ভোগের কোন সুরাহা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকে অনুদানের অর্থ ও সামগ্রী লুটপাটে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এরপর রুশ-ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হলে এই জনগোষ্ঠীই আবার নতুনভাবে আর্থিক সংকটে নিপতিত হয়েছে। খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন আমদানিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইতোমধ্যে তাদের আর্থিক দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন মহলের সীমাহীন দুর্নীতি ও অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি ও অপতৎপরতা। সব মিলিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের এখন নাভিশ্বাস ওঠেছে। কিন্তু এই মরণদশা থেকে তাদের উদ্ধারের কোন তৎপরতা বা উদ্যোগ নেই সরকারের। ক্ষমতাসীন মহলকে অসাধু ব্যবসায়ীদের দয়ার ওপর ১৬/১৭ কোটি মানুষের ভাগ্যকে ছেড়ে দিতে দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থা আর কতোকাল চলবে? আর কতো দুর্ভোগ পোহাতে হবে এদেশের সীমিত আয়ের সাধারণ জনগণকে?