ভাসমান ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৩, ১২:১৫:৫২ অপরাহ্ন
সিলেট নগরীর কেন্দ্রস্থল বন্দরবাজারসহ এর সব ক’টি ব্যস্ততম সড়কের রাস্তার দুই পাশে ভাসমান ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য এখন চরমে। চলাচলের ক্ষেত্রে পথচারীদের মারাত্মক অসুবিধা হলেও তাদের অপদখল স্থায়ী রূপ নিয়েছে। ফুটপাত তো বটে রাস্তার এক তৃতীয়াংশ জুড়ে বিস্তৃত ভাসমান ব্যবসায়ীদের পশরা। ফলে রাস্তাগুলো হয়ে পড়েছে সংকুচিত। এতে দিনরাত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
এখন মধুমাস জৈষ্ঠ্য। বাজারে আম কাঁঠাল ও আনারসসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফলের সমারোহ। এসব ফলমূলের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ফুটপাত এবং রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা ভ্যানগাড়িগুলো। অতীতে সিলেটে ভ্যানগাড়িতে ফলমূল কিংবা সবজি বিক্রির রেওয়াজ ছিলো না। ফুটপাতে পশরায় এগুলো বিক্রি হতো। কিন্তু গত দেড়/দুই যুগ ধরে ভ্যানগাড়িতে ফলমূল ও শাকসবজি বিক্রির ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এতে হকারদের সুবিধা হলেও পথচারীদের চলাচলে এগুলো মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। প্রায় সকল রাস্তার একটি বড় অংশ এখন এসব ভ্যানগাড়িতে পণ্য বিক্রয়কারী ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ হকারদের পুনর্বাসনের তথা তাদের পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য হকার্স মার্কেট স্থাপন করলেও সেই মার্কেট প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রায় সব হকারই নগরীর কেন্দ্রস্থলের ফুটপাত ও রাস্তার দুই পাশ দখল করে ব্যবসা করছে।
রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ ও ফুটপাত নির্মাণের ফলে নগরীর জিন্দাবাজার ও আম্বরখানা এলাকায় কিছুটা শৃংখলা ফিরলেও বন্দরবাজার এখনো আগের মতোই জটলাপূর্ণ ও অগোছালো রয়ে গেছে। এখানকার প্রায় সব রাস্তার দুই পাশ জুড়ে অগণিত পশরা ও ভ্যান গাড়ি থাকে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে জমজমাট ব্যবসা। মাছ শুটকি থেকে নানা ধরনের তৈরী খাবারও বিক্রি হয় এখানে। ফলে রাস্তা দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এভাবে ফুটপাত ও রাস্তার একটি বড় অংশ ইজারা দিয়ে একটি অসাধু মহল প্রতিদিন বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। পথচারী ও যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটিয়ে তাদের অর্থ ও মূল্যবান সময়ের অপচয় ঘটিয়ে এভাবে লাভবান হচ্ছে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারী ছাড়াও সিটি কর্পোরেশন ও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অসৎ ব্যক্তিরাও এই ফুটপাত ও রাস্তা ইজারা ব্যবসার সাথে জড়িত এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী জনগণের।
ভাসমান ব্যবসায়ী ছাড়াও ফুটপাত দখলের সাথে একশ্রেণীর দোকানদারও জড়িত। ফুটপাতের ওপর মালপত্র রাখা, অন্যায়ভাবে ফুটপাতের ওপর অতিরিক্ত চালা ও বেষ্টনী তৈরী করেও তারা পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এ নিয়ে পথচারীরা প্রতিবাদ করলে তারা উল্টো তাদের হয়রানি ও হামলা করতে উদ্যত হয়। ফলে অনেকেই এখন আর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন না। মুখ বুঁজে অপদখলকারীদের দৌরাত্ম্য সহ্য করে যান।
দিন যতো যাচ্ছে নগরীতে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ভাসমান ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বিস্তৃত হচ্ছে। তাদের কারণে প্রতিদিন বহু মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে মানুষের। অসুস্থ মানুষ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য যানবাহন সময়মতো হাসপাতাল, ডাক্তারের চেম্বার কিংবা অন্যান্য চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারছেন না। এমনকি হঠাৎ কোথাও আগুন লাগলেও ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে অগ্নিকান্ডের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির আশংকা।
এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে সিলেট নগরীতে একসময় পথচারী ও যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এখনো পিক আওয়ারে অর্থাৎ দিনের ব্যস্ততম সময়ে রিকশাসহ অনেক যানবাহন চালক নগরীর কেন্দ্রস্থল বন্দরবাজারে যেতে চায় না। গেলে দীর্ঘসময় আটকা পড়ার ভয়ে যেতে চায় না।
এ অবস্থার অবসান প্রয়োজন। প্রয়োজনে আরো বাইপাস নির্মাণ এবং হকারদের জন্য নগরীর কেন্দ্রস্থল হাসান মার্কেট ও জেলের জায়গায় স্থায়ী ব্যবসার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল। কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে হকারদের হকার্স মার্কেটে ফিরে যাওয়ারও ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। সর্বোপরি, ফুটপাত ও রাস্তার একাংশে ইজারা ব্যবসা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় শিগগিরই সিলেট একটি স্থবির নগরীতে পরিণত হতে পারে, এমন আশংকা নগরবাসীর।