অনিরাপদ বিদ্যুতে হতাহত বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২৩, ১২:০৫:১৫ অপরাহ্ন
সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে চট্টগ্রামে রাস্তার পাশ্ববর্তী বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে জাহিদ নামক এক রিকশা চালকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রাস্তা দিয়ে রিকশা চালিয়ে যাওয়ার সময় বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গায়ের ওপর পড়ে গেলে তার শরীরে আগুন লেগে যায়। এতে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয় সে। পরে হাসপাতালে মারা যায় রিকশা চালক জাহিদ।
এছাড়া গত ১৮ মে সুনামগঞ্জের দোয়ারায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঐদিন দুপুরে স্কুলের পার্শ্ববর্তী একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পাখির বাসা পাড়তে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে। এছাড়া গত ২ মে মেহেরপুরের গাংনীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আব্দুল্লাহ (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ভুট্টা মাড়াইয়ের সময় মাড়াই মেশিনের বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মৃত্যু হয় তার। এছাড়া গত ৩০ মার্চ গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকায় একটি কারখানার নির্মাণাধীন ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। ঐদিন সকালে কারখানায় কাজ করার সময় একটি ২৫ মিলি রড উপরে উঠানোর সময় ১১ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারের সাথে রডের স্পর্শ লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু ঘটে।
বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের জন্য এক ধরনের হাহাকার বিরাজ করলেও ক্ষেত্রভেদে এই বিদ্যুতই হয়ে ওঠছে প্রাণঘাতী। বিদ্যুতের অনিরাপদ ব্যবহার থেকে ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। আর এ ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেখা গেছে দগ্ধ হয়ে প্রাণহানির প্রায় অর্ধেক ঘটছে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায়। মৃত্যুর পাশাপাশি এতে অঙ্গহানির ঝুঁকিও বেশী। কয়েক বছর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে প্রাপ্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে দগ্ধ হয়ে ৭৫৮ জন মারা যায়। তাদের মধ্যে ৩৬৪ জন মারা যায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, যা মোট মৃত্যুর ৪৮ শতাংশ। এর আগের বছর আগুনে পুড়ে মারা যায় ৭৫৪ জন। তাদের প্রায় অর্ধেক মারা যায় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায়। বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়ক বলেন, বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় ক্ষতি ও ভয়াবহতা খুব বেশী। এতে দগ্ধ রোগীর উচ্চ মৃত্যুঝুঁকি পাশাপাশি অঙ্গহানির ঘটনার সম্ভাব্যতার হার অনেক বেশী। এ ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।
২০১৬ সালে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বহির্বিভাগে এবং ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ছিলো প্রায় ৬৫ হাজার। ঐ বছর বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় দগ্ধের সংখ্যা ছিলো ১৫ হাজারের বেশী। এই পরিসংখ্যান প্রায় অর্ধ যুগ আগের। গত কয়েক বছরে এ সংখ্যা যে আরো বেড়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এদেশে বিদ্যুতায়ন তথা বিদ্যুত ব্যবহারের পরিমাণ উন্নত এমন বহু উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় অনেক কম হলেও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার অবস্থা নাজুক হলেও বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা সেই তুলনায় অনেক বেশী। ব্যক্তিগত অসতর্কতা, উন্মুক্ত ও অনিরাপদ বৈদ্যুতিক তার এবং নিম্নমানের বৈদ্যুতিক ক্যাবল ও সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে প্রায়ই বিদ্যুৎ প্রাণঘাতী হয়ে ওঠছে। কেড়ে নিচ্ছে বহু মানুষের প্রাণ। দেশের প্রায় সর্বত্র ওভারহেড অর্থাৎ মাথার ওপরে উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক লাইন থাকায়, প্রায়ই ঝড় তুফানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ছে। এতে প্রাণ যাচ্ছে পথচারীসহ সাধারণ মানুষের। ঝড় তুফানে গাছের ডাল এমনকি অনেক ক্ষেত্রে গাছ বিদ্যুতের লাইনের ওপর ভেঙ্গে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এতেও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় বন্যার পানিতে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ায় সেই তারে জড়িয়ে মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণির প্রাণ যাচ্ছে।
ঝড়তুফান ও বন্যার দিন সামনে। এ সময় বৈদ্যুতিক তারে স্পষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এখন থেকেই বাড়তি প্রয়োজন বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুত ব্যবহারকারী সকলের। সবাইকে দূরে থাকা উচিত বৈদ্যুতিক ছেঁড়া তার, খুঁটি এবং বিদ্যুতের অসতর্ক ব্যবহার থেকে। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।