বাজেটে কর্মসংস্থানে কী বরাদ্দ হচ্ছে?
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মে ২০২৩, ১২:৩৫:৫৪ অপরাহ্ন
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে এক ধরণের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন অর্থ বছরের বাজেটে মূলস্ফীতির ওপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিত। তাদের মতে, নতুন অর্থ বছরে বাজেটে মূল গুরুত্ব দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর। সেই সঙ্গে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। উচ্চাভিলাষী না হয়ে সংযত বা নিয়ন্ত্রিত বাজেট দিতে হবে। বাড়াতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায়। জানা গেছে, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন খাত। এ খাত পাবে ৭৫ হাজার ৯৪৪ দশমিক ৬২ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এ বরাদ্দ ব্যয় করা হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার নির্বাচনী বছরে জনতুষ্টি রক্ষার্থে অবকাঠামো খাতকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। যদিও অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী বাহুল্য ব্যয় পরিহার করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার উপযোগী বাজেট প্রণয়নের নির্দেশনা আগেই দিয়ে রেখেছেন। তাই নির্বাচনী বছর হলেও জনতুষ্টিমূলক কোন ব্যয় বাজেটে থাকছে না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, নতুন অর্থ বছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। তিনি বলেন, প্রধান বিষয় আমরা মূল্যস্ফীতির একটা চাপের মধ্যে আছি এবং এটা সহসা দূর হবে না। সুতরাং সরকারী ব্যয়টা নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। যে সব ব্যয় উৎপাদনমুখী হবে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। জানা গেছে, আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে সরকারের ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করা হবে। লক্ষণীয় যে এ বারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এটা একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু দেশের এই অর্থনৈতিক দুরবস্থার আগামী অর্থ বছরের জন্য বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃচ্ছতা সাধন ও মেগা প্রকল্পে বরাদ্দের বিষয়টি। অবশ্য রাজস্ব আয় বাড়ানো, মূলস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। এগুলো মোকাবেলা ও সমন্বয় করে নির্বাচনের বছরে কীভাবে ব্যয় সমন্বয় করা যাবে তা নিয়ে বাজেটের কাজ মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও আগামী বছরের জন্য চূড়ান্ত করা বাজেটে অনুমোদন দিয়েছেন।
মেগা প্রকল্পে এতো বিপুল অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি কতো সংগত ও যৌক্তিক, এ নিয়ে যে কোন সচেতন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। পরিবহন খাতে অবকাঠামো নির্মাণের মেগা প্রকল্পসমূহে মোট বাজেটের প্রায় ২৯ শতাংশ বরাদ্দের বিষয়টি রীতিমত বিস্ময়কর। করোনা মহামারির পর কয়েক কোটি মানুষ চরম আর্থিক দুর্ভোগে পড়লেও এমনকি অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত ও বন্ধ হয়ে গেলেও এসব বিপন্ন লোকজন ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের টিকে থাকার জন্য গত বছরের কিংবা আগামী অর্থ বছরের বাজেটে তেমন উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেখা যায়নি এবং এখনো দেখা যাচ্ছে না। করোনা মহামারির পর থেকে এ পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হলেও এবং অগণিত মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেলেও তাদের জন্য কোন আর্থিক প্রণোদনা বা সহায়তার ব্যবস্থা নেই বাজেটে। বড়ো বড়ো ঋণ খেলাপীদের ঋণ পুনঃতফশিলকরণ করা হলেও ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের ক্ষেত্রে বাজেটে কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা রাখতে দেখা যাচ্ছে না সরকারকে। বরং এই ধরণের আইওয়াশধর্মী এবং লুটপাটে সুবিধা হয়, এমন মেগা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব হয়েছে, যা করা হয়েছিলো গত বাজেটেও।
বিশে^র বিভিন্ন কল্যাণধর্মী গণতান্ত্রিক দেশের সরকার যখন মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ওপর সবচেয়ে জোর দিচ্ছে তাদের বাজেটে, তখন বাংলাদেশ সরকারের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয় এবং মূল্যস্ফীতি হ্রাস পায় এমন কোন কার্যকর নীতিমালা বা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির মূল কারণ ডলার সংকট দূরীকরণে এ পর্যন্ত তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ডলার পাচার এখনো অব্যাহত আছে, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। রফতানী আয় ও রেমিট্যান্স কমলেও এগুলো বাড়ানোর প্রচেষ্টা তেমন দৃশ্যমান নয়। অসৎ ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করার পাশাপাশি জ¦ালানী তেল, বিদ্যুৎ, সার, খাদ্যপণ্য ইত্যাদি খাতে ভর্তুকি দেয়া দূরে থাক, যা ছিলো তা-ও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ফলে খাদ্যসহ পণ্যমূল্য বাড়ছে, কমছে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয়। হাহাকার বাড়তে বাড়তে এখন তা আর্তনাদে রূপ নিয়েছে। আর্থিক দুর্ভোগে রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠেছে সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষের। এ অবস্থায় এমন প্রস্তাবিত বাজেট এদেশের সিংহভাগ মানুষের জীবনে কতোটুকু কল্যাণ ও স্বস্তি বয়ে আনবে, তা স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাচ্ছে।