পরিকল্পনামন্ত্রীর মর্মস্পর্শী অনুশোচনা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২৩, ৩:৪৫:১২ অপরাহ্ন
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, হাওরে সড়ক নির্মাণ করে মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গল হয়েছে। এখন টের পাচ্ছি হাওরে সড়ক নির্মাণ করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছি। হাওরে সড়ক বানিয়ে উপকারের চেয়েঅপকারই বেশী হয়েছে। বলা বাহুল্য, বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা অন্য কোন কাজে নদীতে বাঁধ নির্মাণ যেমন পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি প্রাকৃতিক জলাধার ও অবাধ পানি প্রবাহের স্থান হাওরে কোন সড়ক বা বাঁধ জাতীয় অপরিকল্পিত প্রতিবন্ধকতা তৈরীও সমান ক্ষতিকর। এ বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র হাওরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ যে আত্মঘাতী হয়েছে, এটা এখন সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এজন্য কোন রাখঢাক না করেই তিনি প্রকাশ্যে অনুশোচনা ও মর্মবেদনার কথা প্রকাশ করেছেন। কাজটি দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর হলেও মন্ত্রীর এই অনুশোচনা ও অনুতাপ মর্মস্পর্শী এবং একই সঙ্গে প্রশংসার দাবিদার। তিনি বলেছেন, হাওরে সড়ক নির্মাণ সংক্রান্ত আর কোন প্রকল্প নেয়া হবে না। আমরা এই বোধোদয়কে স্বাগত জানাচ্ছি। দেশের যে ক’জন মন্ত্রী ইতোমধ্যে তাদের আন্তরিকতা ও কৃতকর্মের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান সিলেট অঞ্চলের এই কৃতী ব্যক্তি এম এ মান্নান। মাঝে মাঝে কিছু বেফাঁস মন্তব্য করে আলোচিত ও সমালোচিত হলেও দেশের জনগণ বিশেষভাবে তাঁর নিজ জেলার মানুষের কল্যাণে তিনি অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। একথা তার ঘোর বিরোধীরাও স্বীকার করবেন। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, এদেশে এ পর্যন্ত মেগা প্রকল্পসহ বহু ছোট বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যেগুলো এ মুহূর্তে না করলেও চলতো। যখন মানুষের কর্মসংস্থান ও খাবারের প্রয়োজন, তখন বড় বড় স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু এজন্য সংশ্লিষ্টদের মাঝে কোনরূপ অনুশোচনা বা অনুতাপ লক্ষণীয় নয়। যখন দেশের পুরো সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা ছিলো প্রথম অগ্রাধিকার অর্থাৎ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তখন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সুড়ঙ্গপথ। এ খাতে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, সেই অর্থে দেশের বহু এলাকার সব ক’টি ছোট খাটো সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা যেতো। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষের চলাচলে সুবিধা হতো, ব্যবসা বাণিজ্য চাঙ্গা হতো। শক্তিশালী হতো দেশের অর্থনীতি। কিন্তু তা করা হয়নি। আর এজন্য সংশ্লিষ্টদের মাঝে কোন দুঃখ বোধ বা পরিতাপ নেই। সজ্জন আমলা ও রাজনীতিবিদ এম এ মান্নান যদি হাওরের প্রকল্প থেকে এভাবে অন্যায়ভাবে লাভবান হতেন, তবে এটা দেশ ও জাতির জন্য যতোই ক্ষতিকারক হোক, তিনি মনে মনে উৎফুল্ল থাকতেন, অনুতপ্ত হতে
হতো না তাকে।
ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তি কিছুকাল আগেও বললেন কৃচ্ছ্রতার কথা। তাগিদ দিলেন সরকারী কর্মকর্তা ও জনগণ উভয়কে কৃচ্ছতা সাধনের জন্য, অপচয় কমানোর জন্য। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেই পুরোনো কায়দায় মেগা প্রকল্পের জন্য বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটা করা হয়েছে দলীয় ও ঘনিষ্ঠ লোকজনের তুষ্টির জন্য, অবাধ লুটপাটের জন্য। তরুণ যুবাসহ কোটি কোটি মানুষ যখন বেকার ও অর্ধ বেকার অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে, তখন তাদের জন্য কর্মসংস্থান তথা কলকারখানা ও উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান স্থাপন না করে অনুৎপাদনশীল মেগা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে। আর এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী আমলা ও নেতানেত্রীদের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ কিংবা অনুশোচনা নেই। অনুতাপ ও অনুশোচনার খরা তথা মূল্যবোধের এই চরম অবক্ষয়ের সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের উপরোক্ত দুঃখবোধ ও অনুশোচনা যে কোন মানুষের হৃদয় স্পর্শ করার মতো। আমরা তাকে সাধু ও স্বাগত জানাচ্ছি।