পাপের ফল পেতেই হবে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০২৩, ১২:৩৫:০৫ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি অনলাইন পত্রিকায় ‘বাংলাদেশী আমেরিকানদের সম্পদের খোঁজ, হঠাৎ বাড়ছে রেমিট্যান্স’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস অর্থাৎ বিচার মন্ত্রণালয় আমেরিকান ব্যাংকগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী আমেরিকান বা দেশে ব্যাংক একাউন্ট আছে এমন বাংলাদেশী নাগরিকদের ব্যাংক একাউন্টের বিস্তারিত তথ্য দিতে বলেছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি সংস্থা বাংলাদেশী নাগরিকদের সম্পত্তির তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। এ ধরনের পদক্ষেপ ইতোমধ্যে সন্দেহ তৈরী করেছে। বেশ কয়েকজন মার্কিন আইন প্রণেতা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহবান জানিয়েছেন। এ অবস্থায় হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশীদের পাচারকৃত অবৈধ অর্থ ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারে, এমন আশংকা থেকে এ ধরনের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ঘটেছে।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইকোর্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিমত ব্যক্ত করেছে। গত রোববার নদী দখল সংক্রান্ত এক মামলা শুনানীকালে এক পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, এদেশেই থাকতে হবে, লুট করে আমেরিকায় নিয়ে যাবেন সব রেখে দেবে। তাই পরিবেশটা ঠিক রাখতে বলেন, বরিশালের সন্ধ্যা নদী দখলমুক্ত করে প্রতিবেদন না দেওয়ায় ডিসির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবিকে উদ্দেশ করে এমন মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এমন মন্তব্য বা পর্যবেক্ষণ দেশের সচেতন মহলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। অনেকে হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সত্যভাষণ ও সতর্কবাণী উচ্চারণের জন্য।
বেশ কয়েকমাস ধরে এদেশের অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ নিয়ে নানা কথা ছড়িয়ে পড়েছিলো। এর পাশাপাশি স্যাংশন নিয়েও নানা সত্যমিথ্যা খবর প্রকাশিত হচ্ছিলো বিভিন্ন মিডিয়ায়। এমনকি বাংলাদেশ সরকারকেও এ নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় প্রকাশ করে নানা বক্তব্য প্রদান করতে দেখা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্যাংশন না দেয়া হলেও এর চেয়ে মারাত্মক মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যার ফলে শুধু ভিসা নিষিদ্ধ, ভিসা বাতিলই নয়, বরং যার ভিসা বাতিল বা নিষিদ্ধ হবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তার অর্থ ও সম্পত্তিও জব্দ হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে। উপরোক্ত প্রতিবেদনের বক্তব্য এর প্রমাণ। দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে যে বিচার বিভাগ অনেক সত্য প্রকাশ করেনি বা করতে পারেনি, তারাও এখন কিছু কিছু সত্য কথা অকপটে বলতে শুরু করেছেন। হাইকোর্টের উপরোক্ত মন্তব্য এর উদাহরণ।
একথা অনস্বীকার্য যে, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত যে অর্থ বিদেশে বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়েছে এবং সেই অর্থ ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হয়েছে কিংবা যে অর্থ দিয়ে সম্পত্তি ক্রয় করা হয়েছে, তা যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাজেয়াপ্ত করে নেয়, তবে তা ফেরত পাবার সম্ভাবনা শূন্য বলা যায়। ইরান, রাশিয়া, আফগানিস্তান ইত্যাদি দেশের জব্দকৃত অর্থ আজো ফেরত পাওয়া যায়নি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তাই সময় থাকতেই অর্থ পাচারের মতো এ ধরনের গণবিরোধী ও দেশ বিরোধী তৎপরতা থেকে বিরত থাকা উচিত সংশ্লিষ্টদের। কারণ অসৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদ খোয়া গেলেও এ ধরনের পাপ বা অপকর্মের জন্য ইহ ও পরলোকে শাস্তি পেতেই হবে। সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে বা খোয়া গেছে, আমিতো এসব ভোগ করিনি বলে রেহাই পাওয়া যাবে না। অতএব সময় থাকতেই সাবধান হওয়া উচিত। একই সঙ্গে সরকারের বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আমরা এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।