এমবেডেড জার্নালিজম বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুন ২০২৩, ১২:৩০:২৯ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ভারতের এনডিটিভি’র অনলাইন সংস্করণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে ভারতের গণতন্ত্র সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ-এর কৌশলগত যোগাযোগ বিষয়ক সমন্বয়ক জন কিরবি’র কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগামী মাসের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ভাগে জন কিরবি এমন বক্তব্য রাখেন। জন কিরবি ভারতকে তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বহুমাত্রিক অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। তবে ভারতে গণতন্ত্রের অবস্থা ভালো নয়। তিনি মোদীর নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারতের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করেন।
বলা বাহুল্য, ভারতের বর্তমান শাসক গোষ্ঠী নিজ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শুধু ভঙ্গুর ও বিপন্ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিবেশী বাংলাদেশেও একই ধরনের অগণতান্ত্রিক ভূমিকা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করছে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নজর এড়াতে পারেনি। তাই তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি সরকারপন্থী ভারতীয় মিডিয়া ও সাংবাদিকরা বাংলাদেশে পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে বেশ হৈ চৈ ও শোরগোল করতে দেখা যাচ্ছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিশেষভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
গত ৪ জুন ‘বাংলা ইনসাইডার’-এ বাংলাদেশে আমেরিকার দাদাগিরি, ভারত হাত গুটিয়ে থাকতে পারে না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে প্রতিবেদক অমল সরকার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন পররাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বেশি বিচলিত। অথচ কে না জানে এগুলি এখন খাস আমেরিকাতেই বড়ো প্রশ্নের মুখে। যে দেশে আজও কালো মানুষেরা নিরাপদ নয়।
এছাড়া তিনি আরো লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী বাংলাদেশে দীর্ঘ সেনা শাসনে বাঙালি জাতি স্বত্তাকে ভুলিয়ে দিতে মৌলবাদের পরিকল্পিত উত্থান স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে আরো শক্তিশালী করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে থিতু হতে না দেওয়াই ছিলো রাজনৈতিক লক্ষ্য। সত্য কথা বলতে কী, স্বাধীনতা পরবর্তী বহু বছর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এই বৈপরীত্য বিরাজ করছে।
সাংবাদিক অমল সরকার তার লেখায় তার নিজ দেশে বর্তমানে গণতন্ত্রের অবস্থা, মানবাধিকার ও সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের বিষয়টি এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে গত দেড় দশক ধরে বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতির জন্য কোন ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। তার যতো ক্ষোভ বাইডেনের গণতন্ত্র প্রীতি ও নীতি এবং বাংলাদেশে তার কথিত মৌলবাদের উত্থান নিয়ে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা সম্পর্কেও তার কোন অভিযোগ নেই। এদেশে যে এখন মূল্যস্ফীতি স্মরণকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এবং দেশজুড়ে জনগণ হাহাকার করছে দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে এ বিষয়টিও এড়িয়ে গেছে তার লেখনি।
মোদ্দা কথা, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের গণতান্ত্রিক ভূমিকার কারণে এবং বাংলাদেশী দুর্ভোগ পীড়িত সাধারণ মানুষের উত্থানের দরুন একটি পরিবর্তন আসন্ন দেখে এই ভারতীয় সাংবাদিকের যেনো পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কী চায় না চায়, এদেশে গণতন্ত্র আছে কি না আছে সেটা তার কাছে মূখ্য নয়, তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভারতের স্বার্থ আর এটাই ফুটে ওঠেছে তার লেখায়। এদেশের সচেতন মানুষ এই ‘এমবেডেড জার্নালিজম’ অর্থাৎ ফরমায়েশী পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন পড়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। আর তা প্রকাশ পেয়েছে মিডিয়ার মন্তব্য কলামে।