গরম : টক অব দ্য কান্ট্রি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২৩, ১২:৩০:৫৬ অপরাহ্ন
এদেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে দু’টি। একটি নতুন মার্কিন ভিসা নীতি এবং অপরটি গরম। একটি দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, অপরটি প্রকৃত অর্থেই জীবন ও পরিবেশকে উত্তপ্ত করে জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলেছে। সবার মুখেই এখন একটি কথা, কী অসহ্য গরম! ‘গরম’ অর্থাৎ ‘উত্তাপ’ এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। সিলেটসহ সারা দেশে এখন বইছে হিটওয়েভ অর্থাৎ তাপপ্রবাহ। অসহ্য গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। তীব্র গরমে দেশজুড়ে ডায়রিয়া, সর্দিকাশি ও জ্বরসহ নানা রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে হিটস্ট্রোকে বেশ কিছু লোকের মৃত্যু হয়েছে সিলেটসহ সারা দেশে। এখনো হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মাঝে মাঝে কোথাও ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেও এখনো দেশ পুড়ছে তীব্র গরমে। আর আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
এই চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ার কবলে পড়ে দেশের মানুষ গরম থেকে রেহাই পাবার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং মানুষের এই অসহায়ত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শহরাঞ্চলে বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও ইলেক্টনিক্সের দোকানে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রি বেড়েছে চার্জার ফ্যান, চার্জার লাইট ও হাইস্পীড ফ্যানের। এই সুযোগে সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবসায়ী এসব সামগ্রীর দাম দেড়গুণ/দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছেন। ২ বা আড়াই হাজার টাকার চার্জার ফ্যান বিক্রি করছেন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায়। বাসায় বাচ্চা-কাচ্চা ও বয়োবৃদ্ধ লোকজনের কষ্টের কথা ভেবে অনেকে বর্ধিত মূল্যে এগুলো কিনে নিচ্ছেন। অনেক ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর ব্যবসায়ী দোকানে ‘চার্জার ফ্যান নেই’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অস্বাভাবিক দামে চার্জার ফ্যান বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে চার্জার ফ্যান আনিয়ে দেয়ার কথা বলে বেশী দাম রাখছেন।
গরম ও লোডশেডিংয়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত দামে চার্জার ফ্যান বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বাজার তদারকিতে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। রাজধানীতে পরিচালিত এই অভিযানে কর্মকর্তারা দেখতে পান, প্রতিটি চার্জার ফ্যান সুযোগ বুঝে পাইকারী দোকানেই দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৪-৫ হাজার টাকা। এরপর খুচরো পর্যায়ে সেটি হয়ে যাচ্ছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ এক অস্বাভাবিক অসহনীয় ব্যাপার। এছাড়া এই সুযোগে চার্জার ফ্যানসহ নি¤œমানের অনেক ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ছাড়া হয়েছে বাজারে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় চার্জার ফ্যান বিস্ফোরণে আগুন ধরে একই পরিবারের শিশুসহ ৫ জন দগ্ধ হয়েছেন।
এভাবে দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ নানা ধরনের বাড়তি সংকট ও বিপত্তি সৃষ্টি করেছে। অনলাইন পত্রিকা সম্প্রতি ‘বাংলা ইনসাইডার’-এ ‘অধিকাংশ জেলায় তীব্র তাপদাহ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের বেশির ভাগ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ, যা অব্যাহত থাকতে পারে আরো কিছুদিন। ইতোমধ্যে তাপদাহের কারণে বিভিন্ন স্কুলে কয়েকদিনের জন্য বন্ধও রাখা হয়েছে। গরম না কমলে এই ছুটি বর্ধিত করা হতে পারে। এমন বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলায় সচেতন মহল বৃক্ষরোপণ ও ছাদ বাগান করতে উৎসাহিত করছেন। বাড়িঘর বিশেষভাবে বড়ো বড়ো ভবনে গ্রীণ এনভায়রণমেন্টের আওতায় নিয়ে আসারও আহবান জানানো হচ্ছে। সর্বোপরি বৈশ্বিক জলবায়ূর উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে এখন থেকেই বাড়তি প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় আগামী দিনগুলো আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠতে পারে, এমন আশংকা অমূলক নয় বরং অত্যন্ত বাস্তব।