রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২৩, ১২:৩০:৪৫ অপরাহ্ন
জানা গেছে, বাজেটে মহার্ঘ্য ভাতার ঘোষণা না থাকলেও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকুরীজীবিদের বেতন বাড়ানোর একটি প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির সাথে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সিংহভাগ মানুষের আয় না বাড়লেও সরকারি চাকুরিজীবিদের বেতন বৃদ্ধি কতোটুকু যৌক্তিক এ নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকের মতে, সরকার পরিচালনার সাথে যুক্ত একটি বিশেষ মহলকে তুষ্ট করতে ঝুঁকি সত্বেও সরকার বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে সরকারি চাকুরিজীবিদের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। তবে বিভিন্ন কর্পোরেশন ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এই সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। আর বাকী চাকুরিজীবিদের সবাই বেসরকারি পর্যায়ের। গত কয়েক মাসে এমনকি কয়েক বছরে তাদের বেতন বা আয় বাড়ার পরিবর্তে বরং কমেছে। করোনার সময় এবং পরবর্তীকালে অনেকেই চাকুরি হারিয়েছেন। অনেকের বেতন কর্তন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সরকারি চাকুরিজীবিদের আরেক দফা বেতন বৃদ্ধির দরুন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে, তাদের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি কবে, দুর্ভোগ বাড়বে এই সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর। চলতি অর্থ বছরে সরকারি চাকুরিজীবিদের বেতন ভাতা খাতে ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা লাগবে। প্রস্তাবিত বাজেটে বেতন ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৭০হাজার ৭০১ কোটি টাকা।
দেখা গেছে, সরকারি চাকুরিজীবিদের বেতন ভাতা ও পেনশনসহ অন্যান্য খরচ বাবদ মোট বাজেটের ২২ থেকে ২৮ শতাংশ ব্যয় হয়। আর গত এক দশকে সরকারি চাকুরেদের বেতন ভাতা বাবদ সরকারের খরচ বেড়েছে ২২১ ভাগ। সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ সেই হিসেবে সরকারি চাকুরিজীবিরা দেশে মোট জনসংখ্যার দেড় শতাংশেরও কম। অথচ এই দেড় শতাংশ মানুষের পেছনে বাজেটের ২২ থেকে ২৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। অনেকের মতে, সরকারি চাকুরিজীবিরা সব দিক দিয়েই সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। সরকারি বেতনের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ নিয়ে থাকেন অনেকে, হতে পারে তা অনৈতিক পন্থায়। কিন্তু এমন আয় অনেকে যে করছেন এটা তো বাস্তব সত্য। এছাড়া আছে পেনশন, যা বেসরকারি চাকুরিজীবিদের নেই।
বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে সরকারি বেসরকারি সকল নাগরিকের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা আছে। সম্প্রতি সরকার যে সার্বজনীন পেনশনের ঘোষণা দিয়েছে, তা অধিকতর আর্থিক সৃষ্টিকারী ও শোষণমূলক। দীর্ঘদিন খেয়ে না খেয়ে টাকা জমা রাখার পর এই পেনশনের অর্থ দেয়া হবে। তখন মূল্যস্ফীতির ফলে অর্থের মূল্যমানও কমে যাওয়ার আশংকা।
যা-ই হোক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবাই যে সমান সুবিধাভোগী তা নয়। নিচের লেভেলে অধিকাংশ কর্মচারী তাদের বেতনে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় বেতন না বাড়িয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি হ্রাস করা সবচেয়ে জরুরি, এমন অভিমত অর্থনীতিবিদ ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকের। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন সুষ্ঠু কোন পরিকল্পনা নেই। নেই কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোন উদ্যোগ। দেশি বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে দিন দিন। দেশে কল-কারখানাসহ উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। ফলে কর্মসংস্থান বা আয় বৃদ্ধি হচ্ছে না সাধারণ মানুষের। এ সব বিষয়ে বার বার জোর দেয়া সত্বেও ক্ষমতাসীনদের নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। অপর দিকে সাধারণ জনগণ বঞ্চিত ও অবহেলিত অবস্থায় চরম আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের এই দুর্ভোগের রাত পোহাবে কবে? কবির ভাষায় বলা যায়, রাত পোহাবার কত দেরী, পাঞ্জেরী?