মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:২৭:৩৮ অপরাহ্ন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লুসহ ৪ জন প্রতিনিধির বাংলাদেশে ৪ দিনের সফর নিয়ে দেশ-বিদেশে মানুষের মাঝে এখন প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এই সফর বাংলাদেশে এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারী উজরা জেয়া ও মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঢাকায় অবস্থানকালে আসন্ন সংসদ নির্বাচন পরিস্থিতি, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা, শ্রম অধিকার ও বাণিজ্য বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। সফরকালে তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর পাশাপাশি গণমাধ্যম প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, নির্বাচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে আসার আগে দলের সদস্য আন্ডার সেক্রেটারী উজরা জেয়া ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। পরে প্রতিনিধি দলটি দিল্লীতে আসেন। ভারতে ৩ দিনের সফর শেষে গতকাল বাংলাদেশে আসেন।
এই শক্তিশালী মার্কিন প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ দেশব্যাপী নানা আলোচনা ও জল্পনা কল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকের মতে, নির্বাচনের আগে তাদের এই সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিশেষ কোন বার্তা নিয়ে আসতে পারেন তারা। কারণ গত কয়েক মাস যাবৎ যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগ উৎকন্ঠা প্রকাশ করে আসছে। তারা বার বার একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। এমনকি এই নির্বাচনকে একটি মডেল নির্বাচন হিসেবে দেখতে চাইছে তারা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, গোটা বিশ্ব এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। একথা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিচ্ছে, তাগিদ দিচ্ছে।
ইতোমধ্যে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, আমি বুঝতে পারছি না, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের দাবির প্রতি কেউ আপত্তি জানাবে কেনো? তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতির কথা নিজেই বার বার বলেছেন। যেটা আমরাও বলেছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্ব। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাউকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে আমরা সমর্থন করিনি। আমরা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো এবং জাপান, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশের এ ধরনের তাগিদকে বাংলাদেশ সরকার যে সুনজরে দেখছে না, এটা স্পষ্ট। মুখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিতর্কিত পন্থায় এবারও নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে। অন্তত: ক্ষমতাসীন মহলের হাবভাব ও কথাবার্তায় এমনটিই প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারের এই অবস্থান আঁচ করতে পেরে এই মার্কিন প্রতিনিধি দল হয়তো কোন কঠিন ও চরম বার্তা দিতে পারেন, এমন কথাবার্তা এখন দেশে চাউর। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর ৭ জন উর্ধতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ঘোষণা করেছে কঠোর ভিসা নীতি বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা এভাবে একটার পর একটা পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিরোধী দলগুলোও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নেমেছে। দাবি জানাচ্ছে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের।
এ অবস্থায় অস্থির ও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। এই উত্তেজনা প্রশমনে মার্কিন প্রতিনিধি দলের ভূমিকা কী হয়, তা দেখার জন্য গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন গোটা দেশের জনগণ। দেখা যাক, কী হয় শেষ পর্যন্ত-এমন মন্তব্য সচেতন মহলের।