বিদেশের হাতছানি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:০৮ অপরাহ্ন
অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু মানুষের সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজের জন্য কিংবা শিক্ষার উদ্দেশ্যে এই বিদেশমুখিতা এখন তুঙ্গে। এর পেছনে বিদেশে কাজকর্ম ও পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি এবং একই সঙ্গে দেশের আর্থিক সংকট ও কর্মসংস্থানের অভাব বিশেষভাবে দায়ী। এ অবস্থায় বিদেশের হাতছানিকে অনেকেই উপেক্ষা করতে পারছেন না। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আবার অনেকে স্টুডেন্ট ভিসায় এসব দেশে গিয়েছেন। সম্প্রতি কানাডায় গমনের হার অতীতের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটিতে বিদেশীদের গমন এতোই বেড়েছে যে, সে দেশে তীব্র আবাসন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ছোট বড়ো সব শহরেই এ সমস্যা। এর ফলে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বাড়ি ভাড়া করতে না পেরে হাজার হাজার ডলার খরচ করে হোটেলে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। অর্থনীতিবিদরা এই সংকটের জন্য প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে স্রোতের মতো আসতে থাকা শিক্ষার্থী ও অভিভাসীদের দায়ী করেছেন। তা সত্বেও একথা সত্য যে, এসব উন্নত ও বৃহৎ দেশগুলোর ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশী। সুযোগ সুবিধা যেমন বেশী তেমনি সুযোগ সৃষ্টির ক্ষমতাও অসাধারণ।ইতোপূর্বে যুক্তরাজ্যে বহু লোক ওয়ার্ক পারমিট ও শিক্ষার্থীদের স্পাউস ভিসায় গমন করেন। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা ব্রিটেন যাওয়ার হিড়িক পড়ে। ফলে অনেকে সে দেশে গিয়ে আবাসনসহ কর্মসংস্থানে বিপত্তির মুখে পড়েন। অনেক বাংলাদেশীকে মসজিদে রাত্রিযাপনসহ চিড়ে মুড়ি বিস্কুট খেয়ে দিন কাটাতে হয়। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয়, যাদেরকে মসজিদে রাত কাটানো ও চিড়া মুড়ি খেয়ে দিন কাটাতে হয়েছিলো, তাদের প্রায় সবাই এখন থাকার ব্যবস্থাসহ মোটামুটি ভালো চাকুরী জুটিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও যারা বৈধ-অবৈধভাবে গিয়েছেন, তারাও কোন না কোনভাবেই টিকে গেছেন বা টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। আগামীতে তারাও যে নিজ দেশের আর্থিক সংকট ও অনিশ্চিত জীবনের চেয়ে ভালো থাকবেন, একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।সবচেয়ে বড় কথা, এদেশের দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের চেয়ে এসব প্রবাসী অভিযাত্রীরা অবশ্যই ভালো থাকবেন এমনটি আশা করা দুরাশা নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ যেভাবে সংকুচিত হচ্ছে এ অবস্থায় এদেশের আর্থিক সংকটে থাকা সীমিত আয়ের মানুষ ও কর্মহীনদের বিদেশ যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এভাবে ব্যাপক হারে অভিবাসন দেশ থেকে ব্রেনড্রেন অর্থাৎ মেধা পাচারের মতো জাতীয় সমস্যা সৃষ্টি করবে, সৃষ্টি করবে দক্ষ কর্মী সংকট।কিন্তু তা সত্বেও বাংলাদেশীদের বিদেশ গমনকে থামিয়ে দেয়া বা নিয়ন্ত্রণের কোন চেষ্টা যে সফল হবে না, এটা হলফ করে বলা যায়। আর এমন চেষ্টা সরকারী পর্যায়ে কখনো করা হবে বলে মনে হয় না। কারণ বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলারের জন্য দেশে হাহাকার চলছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের জন্য সরকারকে পিপাসার্ত চাতকীর মতো অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, নানা ধরনের ভুয়া সনদ নিয়ে অনেকেই বিদেশ যাচ্ছেন। এতে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে নষ্ট হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। তাই সরকার ভুয়া সনদ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামীদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশনা জারি করেছে। বিদেশ গমনকে নিরুৎসাহিত না করে এসব অপকর্ম ও অপরাধ বন্ধ, নিদেনপক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল।সম্প্রতি সেলুন, সোনার দোকান এবং টেক্সটাইল সেক্টরে প্রায় ১৫ হাজার বিদেশী শ্রমিক নেবে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়া। এই তিন সেক্টরে শ্রমিকদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে দেশটিতে। বাংলাদেশ থেকে এসব সেক্টরে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শ্রমিক প্রেরণে প্রতিবন্ধকতাও দূর করা জরুরী।সর্বোপরি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত ও বিত্তশালী দেশে যে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক সংকট ও ঘাটতি বিরাজ করছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। আর এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। আশা করি সরকার অবিলম্বে এদিকে সুদৃষ্টি ও মনোযোগ দেবেন।