ঋণ করে ঘি খাচ্ছে কারা?
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:৩১ অপরাহ্ন
‘ঋণ করে ঘি খাওয়া’- বলে একটা কথা প্রচলিত আছে এদেশে। সাধ্যের বাইরে গিয়ে বিলাসিতা বুঝাতে এই প্রবাদ বাক্যটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এটা আরো ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায় যখন একটি দেশের সরকার বা ক্ষমতাসীন দল দেশের পক্ষে বা নামে ঋণ করে সেই ঋণের একটি বড় অংশ নিজেরা লুটেপুটে খায়। আর ঋণের দায়ভার চাপায় দেশের কোটি কোটি মানুষের উপর। বাংলাদেশের সতেরো / আঠারো কোটি মানুষ আজ এমনি এক ঋণের বোঝা নিয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
গতকাল ইংরেজী মিডিয়া ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’- এ ফরেন ডেট রিপেমেন্ট প্রেশার মাউন্টস’- এ (বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে) শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৩ বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সারে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল মাত্র ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আসল ৬৮৬ মিলিয়ন এবং সুদ ছিল ১৯০ মিলিয়ন। অথচ ইকোনোমিক রিলেশন ডিভিশনের (ইআরডি) ডাটা অনুসারে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১.৯ বিলিয়ন ডলার। ইতোপূর্বে আর কখনো আসল পরিশোধ ২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের ১৭ বিলিয়ন পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য চীন থেকে ১.৬৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করে। এই ঋণ পরিশোধের ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ড বা ছাড়ের মেয়াদ গত এপ্রিলে শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছর থেকে এর আসলের কিস্তি পরিশোধ শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশকে ১৫ বছরব্যাপী এই ঋণ পরিশোধ করে যেতে হবে। এছাড়া রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণের আসলের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে ২০২৭ সাল থেকে। ৫০০ মিলিয়নম ডলার করে বৃদ্ধি পাবে প্রতি বছর। কুড়ি বছর ধরে এই ঋণ শোধ করতে হবে। এছাড়া মেট্রোরেলের জন্য গৃহীত ঋণের জন্য প্রতি বছর আসলের অর্থ পরিশোধ করতে হবে ৪.৫ বিলিয়ন থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের প্রকৃত ঋণ পরিশোধের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পাবে ২০২৫-২৬ থেকে ২০২৬-২০২৭ অর্থ বছর পর্যন্ত। এগুলো ছাড়াও বিদ্যুৎ উন্নয়নের জন্য ডিপিডিসি প্রকল্পের জন্য ২০১৯ সালের ৪ জুলাই চীন থেকে নেয়া ১.৪ বিলিয়ন ডলার, বঙ্গবন্ধু ট্যানেল প্রজেক্টের জন্য গৃহীত ৪০৫ মিলিয়ন ডলার ও রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য এডিবি থেকে নেয়া ৪৫০ মিলিয়ন ডলারসহ আরো অনেকগুলো প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ এখন থেকেই শুরু হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিপুল ঋণের ভারে ভারাক্রান্ত এখন এদেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় সরকার সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার সংকট নিরসনে অর্থব্যয় করবে না বৈদেশিক ঋণের সুদাসল পরিশোধ করবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মুল্যস্ফীতি বেড়ে পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। কোটি কোটি মানুষ শান্তিতে দুমুঠো খেয়ে পরে বাঁচতে পারছে না। অন্ন সংস্থানে হিমসিম খাচ্ছেন তারা। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত এই দশা। সরকার এ পর্যন্ত উন্নয়নের নামে শুধু সুড়ঙ্গ, সেতু ইত্যাদি অবকাঠামো তৈরি করেছে, কিছু অর্থে বাকী অর্থ লোপাট ও পাচার হয়েছে। সাধারণ মানুষের আর্থিক দুর্ভোগ লাঘবে কিছুই করেনি। এভাবে লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে উন্নয়নের নামে। আর অসহায় নিরন্ন মানুষের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে লক্ষ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ। মাঝখান থেকে ঋণের অর্থে ঘি খেয়ে পগারপার হওয়ার চেষ্টা করছে রাষ্ট্রীয় লুটেরা গোষ্ঠী।