বোধোদয় হবে কি ইসরাইলের?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:৩০ অপরাহ্ন
গতকাল ‘দ্য টাইমস অব ইসরাইল’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে যে, দুবাইয়ে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে দ্বিবার্ষিক ‘দুবাই এয়ারশো’। মেলায় অংশ নিচ্ছে ইসরাইলসহ বিভিন্ন দেশ। কিন্তু উদ্বোধনী দিনে ইসরাইলের স্টলে কোন দর্শনার্থী দেখা যায়নি। এমনকি কোন সেলস পারসনও ছিল না উক্ত স্টলে। একজন অ্যাটেনডেন্ট থাকলেও তাকে দেখা যায়নি স্টলে।
গাজায় ইসরাইলী গণহত্যা নিয়ে মুসলিম দেশগুলোতে বিশেষভাবে আরব দেশগুলোতে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। পূর্বে নির্ধারিত দুবাই এয়ারশো’তে এর প্রভাব পড়েছে। ফলে ক্ষুদ্ধ লোকজন ইসরাইলের প্রোডাক্টের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এয়ারশো’তে ইসরাইলী যুদ্ধ বিমান ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রদর্শিত হলেও সেদিকে দর্শনার্থীদের নজর নেই। এছাড়া বিশ^ব্যাপী ইসরাইলী পণ্য বর্জনেরও হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশে^র মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ সচেতন ও বিবেকবান মানুষেরা ইসরাইলী পণ্য বর্জন করছেন। এর পরিবর্তে হালাল পণ্যের প্রতি ঝুঁকেছেন মুসলিম বিশে^র ক্রেতারা। এ অবস্থায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে হালাল পণ্য সামগ্রীর বাজার।
গাজায় শিশু ও নারীসহ গণহত্যায় জড়িত হয়ে ইসরাইলীরা বহুমূখী সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট অন্যতম। ইসরাইলী পণ্য বর্জনের ফলে ইতোমধ্যে দেশটির আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ ইসরাইলে আর্ন্তজাতিক ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। প্রায় বন্ধ আর্ন্তজাতিক ব্যবসা বাণিজ্য। অনেক ইসরাইলী ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। গোটা দেশের কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে আছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। এই যুদ্ধে হামাসের কাছে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তাদের সামরিক শক্তি অপরাজেয় বলে এতোদিন যে ‘মিথ’ প্রচলিত ছিল, তা ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে হামাসের হামলায়। দুর্বলতা ধরা পড়েছে তাদের আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আয়রনডোমসহ অন্যান্য অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদির বিষয়ে। শেষ পর্যন্ত ইসরাইল গাজা দখল করতে সক্ষম হতে পারে, তা সত্বেও দেশটি যে বিশে^ কোন অপরাজেয় সামরিক শক্তি নয়, এটা এ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে সাম্প্রতিক হামাস-ইসরাইল তথা গাজা যুদ্ধে। সর্বোপরি, হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ইসরাইলী নাগরিকদের মাঝে চরম আতংক সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত ইসরাইলের কয়েকশত সৈন্য নিহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে তাদের অত্যাধুনিক মারকাভা ট্যাংকসহ বহু যুদ্ধযান ও সরঞ্জাম। এতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ও জনগণের মনোবল অনেকখানি ভেঙ্গে গেছে। যুদ্ধের যে আতংকের মধ্যে ইসরাইলী জনগণকে দিন কাটাতে হচ্ছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হলে নাগরিকরা ব্যাপক হারে নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে পারে। আর যারা দেশটিতে বসবাস করছেন তারাও সার্বক্ষনিক ভয়ভীতি ও আতংক নিয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হবেন, যা একটি দেশের জন্য মোটেও স্বাভাবিক ও সুখকর নয়।
তাই ইসরাইলের অবিলম্বে বোধোদয় প্রয়োজন। তাকে স্বাধীন ফিলিস্তিনকে মেনে নেয়াসহ শান্তিপূর্ণ দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পথে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায়, মোকাবেলা করতে হবে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘাতের, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় সত্বেও তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। আমরা বিশে^র সকল বিবেকবান মানুষের মতোই ইসরাইলের এক্ষেত্রে বোধোদয় প্রত্যাশা করি।