অপশক্তির বিরুদ্ধে জাগ্রত থাকুন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩৬:১৩ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘চাকুরীচ্যুতরা ফিরে আসছেন ইসলামী ব্যাংকে, আদেশ জারি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক থেকে যাদের জোর করে ও বাধ্যতামূলকভাবে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছিলো, তাদের ফেরার সুযোগ দিতে যাচ্ছে ব্যাংকটি। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সব প্রতিষ্ঠানের জোর করে চাকুরীচ্যুতদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে ফেরানোর জন্য আদেশ জারি করেছে ব্যাংকটির প্রশাসন। অত্যন্ত প্রশংসনীয় এ উদ্যোগ। একজন মানুষের রুটি রুজির পথ তার চাকরী বা কর্ম থেকে অন্যায়ভাবে বলপূর্বক অপসারণ করা মানে, তার পুরো পরিবারকে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়া। এটা যেমন বেআইনী তেমনি অমানবিক। অথচ এমন অন্যায় ও অমানবিক হাজার হাজার ঘটনা ঘটেছে গত দেড় দশকে। দলীয়করণের চরম পন্থা হিসেবে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার বিগত বছরগুলোতে কত স্বচ্ছল চাকরীজীবীকে যে অর্থহীন ও আশ্রয়হীন সর্বহারাতে পরিণত করেছে, তার পরিসংখ্যান জানা কঠিন। তবে এখন যেহেতু এদেশবাসীর বুক থেকে এই অন্যায় জুলুম ও দলীয়করণের জগদ্দল পাথর সরে গেছে, তাই প্রত্যেক ভিকটিমকে তার ন্যায্য ফিরিয়ে দিতে হবে। ক্ষতিপূরণসহ প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে হবে। বেআইনীভাবে ও জাল সার্টিফিকেট দিয়ে কোটার ছলচাতুরীর মাধ্যমে কিংবা প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে যাদের ঐসব পদে বা প্রশাসনের অন্যত্র বসানো হয়েছে, তাদের অবিলম্বে চাকুরীচ্যুত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে বেআইনীভাবে প্রদত্ত সরকারি অর্থকড়ি ফেরত দেয়ার জন্য নির্দেশ জারি করতে হবে। বিগত বছরগুলোতে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ ফেরত এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। দেশের প্রশাসনসহ সকল স্তরে এমন অভিযান চালাতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান বিপর্যয়কর দশার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি জাল সার্টিফিকেট ও অন্যায় কোটাধারী শিক্ষক শিক্ষিকাদের অপসারন করে যোগ্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিতদের স্থান দিতে হবে। অন্যথায় প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হবে না, সম্ভব হবে না জাতির মেরুদন্ড শিক্ষাকে দৃঢ়ভাবে পুনঃস্থাপন। অবশ্য এমন সংস্কার করতে গিয়ে যাতে কোন নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তি বা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এতো গেলো চাকরী ক্ষেত্রে সংষ্কার ও শৃংখলা পুনরুদ্ধারের বিষয়। অন্যান্য খাত ও ক্ষেত্রেও নিয়ম ও শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যায়ভাবে জেলে আটক ও মামলাধীন ব্যক্তিরা প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার মামলা ও অভিযোগ থেকে ব্যাপক হারে মুক্ত হতে শুরু করেছেন। এটা অত্যন্ত ভালো লক্ষণ। তবে বিচার বিভাগে দ্রুত শৃংখলা ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ মানুষের শেষ ভরসাস্থল হচ্ছে বিচার বিভাগ। এই বিভাগকে গত ১৬ বছরে জনগণের জন্য চরম হতাশা ও নিপীড়ন নির্যাতনের স্থানে পরিণত করেছিলো স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। দ্রুত এর অবসান ঘটাতে হবে।
আমরা লক্ষ্য করছি দেশের প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে এখনো কুচক্রীরা ঘাপটি মেরে আছে। সুযোগ বুঝে তারা উঁকি ঝুঁকি মারছে। নতুন করে চক্রান্তের জাল বোনার চেষ্টা করছে। এদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি এদের অপসারণে বর্তমান প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যতায় আবু সাঈদ, আবরারসহ অগণিত শহীদের জীবনোৎসর্গ ব্যর্থ হয়ে যাবে।
সর্বোপরি যারা গত ১৬ বছরসহ বিগত বছরগুলোতে এদেশ ও এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি সাধন করেছে, তার বিচার করতে হবে। তাদের চক্রান্তের ব্যাপারে ব্যক্তি ও সরকারী পর্যায়ে অত্যন্ত সচেতনতা ও সতর্কতা প্রয়োজন। নইলে তাদের বিষাক্ত ছোবলে আঠারো কোটি মানুষের দেহ নীল হয়ে যেতে পারে আবারো।