প্রশংসনীয় উদ্ভাবন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:৪৫ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘শাবি শিক্ষার্থীরা তৈরী করছে চালকবিহীন গাড়ি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আমেরিকান বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা’র আদলে দেশে প্রথমবারের মতো চালকবিহীন গাড়ি তৈরী করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পন্ন এই গাড়িতে এক সাথে ৩ থেকে ৪ জন যাত্রী বহন করতে পারবে। গাড়ি নির্মাণের সাথে জড়িতরা শাবির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিইই) ও ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী। দলটির দাবি ‘অটোমামা’ নামক এই গাড়িটি দেশের প্রথম সফল ‘লেভেল-২ অটোনোমাস ইলেট্রোনিক ভিসেল’। গাড়িটি দেশের রাস্তায় চলাচল উপযোগী ডেটাসেট দিয়ে তৈরী করা হয়েছে, যেটি প্রাথমিকভাবে পাবলিক রাস্তায় চলাচলে সফল হয়েছে। দলের শিক্ষার্থীদের মতে, বাংলাদেশে অটোনোমাস ইলেক্ট্রনিক ভিসেল নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। ক্যাম্পাসের যাতায়াত ব্যবস্থাকে মাথায় রেখে আমরা এটি তৈরী করেছি এবং সাশ্রয়ী মূল্যে নিজেদের সীমিত রিসোর্স ও ফান্ডের মাধ্যমে আমরা লেভেল ২ তৈরী করতে পেরেছি, তবে এখনো অনেক কাজ বাকী রয়েছে। তারা আরো বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের লক্ষ্য এটাকে আরো উন্নত অর্থাৎ সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম হিসেবে ডেভেলাপ করার। গাড়িটিতে আমরা সৌরশক্তি ব্যবহারের চিন্তাভাবনাও করছি, এজন্য ফান্ডের দরকার। কারণ ফান্ডের অভাবে টেকনিক্যাল টিমের সদস্যরা এটিকে ভালোভাবে ডেভেলপ করতে পারছেন না। তারা আরো জানান, ২০২১ সাল থেকে এ নিয়ে তারা কাজ করছেন। যাত্রী সেবার পাশাপাশি গাড়িটি দিয়ে ফ্যাক্টরী পর্যটন শিল্প ও এয়ারপোর্ট এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
বলা বাহুল্য, শাবি শিক্ষার্থীদের উপরোক্ত উদ্ভাবন অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রুটিন মাফিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত এমনকি উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। ফলে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়েও অনেক নীচে। এ অবস্থায় শাবির শিক্ষার্থীদের এমন প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, উৎসাহিত করতে হয়।
দেখা গেছে, বিশ্বের খ্যাতনামা হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ সালে গবেষণা খাতে ১.১৭ বিলিয়ন ডলার বা ১১৭ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। হার্ভার্ডের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয় বছরে ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলার রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আরএন্ডডি) খাতে খরচ করে। করোনা ভ্যাকসিনের মতো বড় বড় উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়। মহামারি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে তারা টিকা এনেছিলো। বৈশ্বিক নানা সংকট ও সমস্যার সমাধানে যখন নেতৃত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তখন এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার অবস্থা খুবই নাজুক। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করা হচ্ছে শুধু উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া কিংবা শিক্ষার প্রয়োজনে। এসব গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই জাতীয় উন্নয়নে ও দেশের অগ্রগতিতে তেমন কোন অবদান রাখতে পারছে না। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা ও তদারকির ঘাটতিসহ এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব না এমনটি ঘটছে। আমরা আশা করবো শাবি শিক্ষার্থীদের উপরোক্ত গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমটি যাতে ফান্ডের অভাবে আটকে না যায়, সেদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল খেয়াল রাখবেন। আর দেশের অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণাকর্ম এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে সেদিকে সুদৃষ্টি দেবেন সংশ্লিষ্টরা, যা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে অপরিহার্য।