কাজে যোগ দিচ্ছেন ১১ হাজার চা শ্রমিক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:০৬:২০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : টানা দেড় মাস কর্মবিরতির পর ২ সপ্তাহের বকেয়া বেতন পাওয়ার আশ^াসে কাজে যোগ দিচ্ছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১১ হাজার চা শ্রমিক। এদিকে টানা কর্মরিতির কারণে যথাসময়ে চা পাতা উত্তোলন করতে না পারায় কোম্পানীর ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল চা কোম্পানির (এনটিসি) ১২টি বাগানে (ফাঁড়ি বাগানসহ ১৯টি) চা শ্রমিকরা আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে কাজে ফিরবেন। চা শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে টানা কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন। এর ফলে এ বাগানগুলো অচল হয়ে পড়ে।
এ কর্মবিরতির মধ্যে তাদের দাবি ছিল- বকেয়া মজুরি দেওয়া ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রত্যাশা বাস্তবায়ন। এগুলোর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল চা কোম্পানির সবকটি বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সোমবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাধিন লাক্কাতুরা চা বাগানের ব্যবস্থাপক আক্তার শহীদ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে চা শ্রমিকদের নিজ নিজ বাগানে কাজে যোগদানের সিদ্ধান্ত এসেছে। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ন্যাশনাল চা কোম্পানির যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোববার (১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল চা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান, এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক, ডিডিএল নাহিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, চা শ্রমিক নেতা রামভজন কৈরিসহ অনেকে।
এ ব্যাপারে চা শ্রমিক নেতা নিপেন পাল বলেন, চা শ্রমিক প্রতিনিধি, চা বাগান পরিচালনা প্রতিনিধি এবং সরকারি অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এ তিনপক্ষের যৌথ বৈঠকে চা বাগানগুলো দ্রুত রান করানোর (চালু) প্রস্তাবটিকে সবাই সম্মতি দেন। শ্রমিকদেরও লস হচ্ছে আর বাগান কর্তৃপক্ষের তো হচ্ছেই। সর্বোপরি দেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ দিকগুলো সার্বিকভাবে বিবেচনা করে সীমিত পরিমাণে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেওয়ার পরের দিনই বাগান চালুর প্রতিশ্রুতি আসে।
এক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি প্রায় ২ হাজার ২০০ টাকা করে শ্রমিকদের দেওয়া হবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে এ চা শ্রমিক নেতা বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দেওয়ার প্রথম দিন শ্রমিকদের ২ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি দেওয়া হবে। মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এখন থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা হবে। বাগানের কর্মচারীদের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এছাড়া বাগান বন্ধের দিনগুলোতে চা শ্রমিকদের রেশন কাটা হবে না।
বোনাস ও বার্ষিক ছুটির দিন গণনার ক্ষেত্রে বাগান বন্ধের দিনগুলো অনুপস্থিত দেখানো হবে না। এদিকে অবশিষ্ট বকেয়া মজুরি আগামী ২০২৫ সালের মার্চ এর মধ্যে পরিশোধ করা হবে। একইসঙ্গে ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের চা শ্রমিক ইউনিয়েনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের আরও বেশি মজুরি দেওয়ার দাবি ছিল। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ তো দিতে পারছে না। শ্রমিকরা প্রায় ৩ মাস আন্দোলন করছেন। কেউ কেউ না খেয়ে ছিলেন। আবার খালি হাতে কাজে ফিরবে এটা তো অমানবিক। তাই আমাদের জোর দাবি ছিল কাজে ফেরার আগেই তাদের বকেয়া যতটুকু সম্ভব দিতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত এসেছে। অন্তত খাওয়া-দাওয়া করে শ্রমিকরা কাজে ফিরতে পারবেন।
এনটিসির ফাঁড়ি চা বাগানসহ ১৯টি চা বাগানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। সে হিসেবে শ্রমিক প্রতি দুই সপ্তাহের মজুরি ২ হাজার ২০০ টাকা করে প্রায় ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে বলে জানান নিপেন পাল।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পাওয়ায় অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। অনেকের ঘরেই খাবার নেই। দীর্ঘদিন থেকে সিলেটে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির অধীনে থাকা ১২ টি চা বাগানের ১১ হাজারের বেশঅ শ্রমিকের মজুরী বন্ধ ছিল। গত দেড় মাস ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
জানা গেছে, ৬ সপ্তাহের বকেয়া বেতনের দাবীতে অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই আন্দোলনে নামে ঐ কোম্পানীর ১২ বাগানের চা শ্রমিকরা। কিন্তু বেতন না পাওয়ায় ২০ অক্টোবর থেকে টানা কর্মবিরতিতে নামেন তারা। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে ঐসব বাগানের চা উত্তোলন কার্যক্রম। ফলে বাগানেই নষ্ট হচ্ছে চা পাতা। এতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ২ মাসের অচলাবস্থার কারণে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা।