স্বাস্থ্যখাতের বিকাশের সুবর্ণ সুযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:২৬ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘ভারতের মেডিকেল ভিসা প্রায় বন্ধ, স্বাস্থ্যখাতের বিকাশের সুযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, চিকিৎসা নিতে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ভারতে চলে যায়। তবে সম্প্রতি সে দেশের মেডিকেল ভিসা প্রায় বন্ধ। এটাকে দেশের স্বাস্থ্যখাতের বিকাশের সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে দেশেই থাকবে বিপুল পরিমাণ টাকা।
লক্ষণীয় যে, চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর বিশে^র বিভিন্ন দেশে যায় কয়েক লাখ বাংলাদেশী। তবে বেশিরভাগের গন্তব্যই ভারত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সীমিত হয়েছে ভারতের মেডিকেল ভিসা। খুব গুরুতর রোগীরাও পাচ্ছেন না ভিসা। ফলে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যাওয়ার হার বেড়েছে। ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভারের নানা সমস্যাসহ ১২ ধরণের রোগের চিকিৎসা নিতে ভারতে যাওয়ার হার বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ থেকে সেবা নিয়ে রোগীরা যদি সন্তুষ্ট হয়ে যায়, তাহলে হয়তো রোগীরা বিদেশমুখী হবেই না। তখন হয়তো দেশের চিকিৎসা কাঠামো গড়ে ওঠবে। এটা একটা বড়ো কাজ হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে বিশ^মানের চিকিৎসা হয়। আস্থা সংকটের কারণ নেই। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) বলেন, ভারতের চাইতে আমাদের চিকিৎসা সেবা কোন অংশেই কম না। স্বাস্থ্য বিভাগের এমন দাবি সত্বেও দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি বিদ্যমান। আর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির দরুণ বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা খাতের উন্নতি হচ্ছে না। এতে রোগীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন উন্নত চিকিৎসা পাবার আশায়।
লক্ষণীয় যে, প্রায় অর্ধযুগ আগে স্বাস্থ্যখাতের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ১১টি উৎস চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশ করে দুদক। এর দু’বছর আগে গঠিত দুদকের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম’ অনুসন্ধান শেষে কমিশনের কাছে এসব সুপারিশ দাখিল করে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ বদলী, পদোন্নতিতে কোন নীতিমালা মানা হয় না। অর্থ আত্মসাতের জন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়। কোথাও কোথাও যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত দেখানো হলেও প্রকৃত পক্ষে যন্ত্রপাতি সরবরাহ বা মেরামত না করেই অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। হাসপাতালগুলোতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ওষুধ থাকলেও রোগীদের তা দেয়া হয় না।
অনেকের মতে, এসব কারণে দেশের সরকারী চিকিৎসাখাতে সেবার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। আর সাধারণ রোগীরা ভালো চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বাধ্য হন বিদেশে চিকিৎসা নিতে। আর যারা বিত্তবান তারা দেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবার ওপর আস্থা রাখতে না পারার দরুণ বাধ্য হন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে। এ অবস্থায় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করতে হবে। দেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এর সাথে যথেষ্ট সংখ্যক উন্নতমানের প্যাথোলজিক্যাল সেন্টারও স্থাপন করতে হবে। বিদেশের সাথে যৌথ বিনিয়োগে কিংবা অন্যান্য দেশকে এদেশে আন্তর্জাতিক মানের উন্নত হাসপাতাল স্থাপনের অনুমতি দেয়া যেতে পারে। বিগত সরকারের আমলে অনেক দেশ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল স্থাপন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু দেশের মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ নেতামন্ত্রী ও আমলাদের কারণে তা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চিন্তাভাবনা ও অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের রোগীদের দুর্ভোগ নিরসনে এবং ভালো ও উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা গড়ে তোলার স্বার্থেই তা করতে হবে।