চাঞ্চল্যকর লিলু হত্যা রহস্য উদঘাটন : জেলে বসে হয় খুনের পরিকল্পনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮:৪২:২২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: নৃশংসভাবে নিহত হওয়ার চার মাস পর সিলেটের বিশ্বনাথে ব্যবসায়ী চাঞ্চল্যকর মনিরুজ্জামান লিলু হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া ভাড়াটে খুনি মাহবুবুর রহমান (২৮)। সে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ধোপাকলা গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সিলেট জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: ওমর ফারুকের আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে আটক মাহবুব।
বৃহস্পতিবার এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান। পিবিআই সিলেট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের ন্যায় স্থানীয় মসজিদে এশার নামাজ আদায় করে বাড়ী ফিরছিলেন ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান লিলু মিয়া (৪৮)। কিন্তু ঘূর্ণাক্ষরেও জানতেন না পথে অপেক্ষা করছে জমদূত। সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ীর কাছে পৌঁছামাত্র অন্ধকারে ঝোপের আড়ালে ওৎপেতে থাকা দূস্কৃতিকারীরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে লিলুকে।
উক্ত ঘটনায় লিলু মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা বেগম বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিশ্বনাথ থানার মামলা নং-০৯, তারিখ-১৬/০৮/২০২৪ইং । বিশ্বনাথ থানা পুলিশ কিছুদিন তদন্ত করার পর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের আদেশে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র এসআই মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম মোল্লার তদন্তে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় একে একে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ১। বিশ্বনাথ থানার নওধার গ্রামের মদরিছ আলীর পুত্র আফজল আলী (২৬) ও ২। সুনামগঞ্জ সদর থানার ধোপাখালী গ্রামের খলিলুর রহমানের পুত্র মাহাবুবুর রহমান (২২) কে।
গত ৮ ডিসেম্বর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই টিম নিয়ে দোয়ারাবাজার থানা এলাকা থেকে আসামী মাহাবুবুর রহমানকে গ্রেফতার করেন। এরপর ৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকালে আসামী মাহাবুব আলোচিত লিলু হত্যাকান্ডে নিজেকে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং অপরাপর আসামীদের নাম ও ঘটনার বিবরণ প্রকাশ করে।
আসামীকে সাথে নিয়ে পিবিআই টিম ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে আসামীর দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রামদা ঘটনাস্থল সংলগ্ন নওধার খাল থেকে উদ্ধার ও জব্দ করে। পাশাপাশি আসামী মাহাবুবের ঘটনার সময় ব্যবহৃত ও ফেলে যাওয়া স্যান্ডেলও উদ্ধার করে। আসামী মাহাবুব সিলেট জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মো: ওমর ফারুকের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান দিয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন আগে লিলু একটি হত্যা মামলার সাক্ষী ও নওধার গ্রামের ফটিক ডাকাত ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ায় ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় তার পরিবার। ২০২১ সালে মাহবুবুর রহমান ছিনতাই মামলায় সুনামগঞ্জ কারাগারে গেলে পরিচয় হয় ফটিক ডাকাতের ভাই আকলু ডাকাতের সঙ্গে। ওই সময় ব্যবসায়ী লিলুকে হত্যার পরিকল্পনা করে মাহবুবকে ভাড়া করে আকলু ডাকাত। এরপর কারাগার থেকে বের হয়ে মাহবুবুর ব্যবসায়ী লিলুকে হত্যার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। দেশের পট-পরিবর্তনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত ১৪ আগস্ট ব্যবসায়ী লিলুকে সন্ধ্যারাতে নিজ বাড়ির রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করে। তার সঙ্গে কিলিং মিশনে আরও দুজন সহযোগী ছিল।
এ মামলায় প্রথমে ক্রসফায়ারে নিহত ফটিক ডাকাতের চাচাতো ভাই আফজালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু তার কাছ থেকে হত্যাকান্ডের তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। ফলে মামলাটি পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ৮ ডিসেম্বর খুনি মাহবুবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) মাহবুবুরকে নিয়ে ব্যবসায়ী লিলুর গ্রামের বাড়ি রামপাশা ইউনিয়নের নওধার গ্রামে এসে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা, আসামির জুতা উদ্ধার করে পিবিআইয়ের তদন্তকারী দল।
মাহাবুব আদালতে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে পিবিআই সিলেট সূত্র জানিয়েছে।