দুই স্বৈরাচারের একই পরিণতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:৩১ অপরাহ্ন
সম্প্রতি সিরিয়ার স্বৈরাশাসক বাশার আল আসাদের পতনের সাথে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতনের অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়। এমনকি স্বৈরাচার পতনের পর বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো, সিরিয়ায়ও এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। সিরিয়ায়ও এখন আসাদের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জালালি হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএম) সিরিয়াল সালভেশন গভর্নমেন্টের (এসএসজি) কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। অর্থাৎ সিরিয়াও বাংলাদেশের মতো একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে।
সিরিয়ার জন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন বলেন, রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিরিয়ার জনগণ তাদের বৈধ আকাংখাগুলি পূরণের পথে এগিয়ে যাবে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ সিরিয়াকে পুনরুদ্ধার করবে। অধিকাংশ স্বৈরশাসকের ন্যায় বাশার আল আসাদের কারাগারগুলো পূর্ণ ছিলো বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শী লোকজনের দ্বারা। এ সংখ্যা লক্ষাধিক। এর চেয়েও বড় কথা এসব কারাগারও এর টর্চার সেলগুলোতে বন্দীদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা গা শিউরে ওঠার মতো।
শেখ হাসিনার আয়নাঘরের মতো নির্যাতন নিপীড়নের কাহিনীগুলো এখন প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। হাসিনা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হাজার হাজার মানুষকে খুন গুম করেছেন। একইভাবে বাশার আল আসাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে খুন গুমের শিকার হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। সিরিয়ায় পিতাপুত্রের দীর্ঘ শাসনামলে অর্থাৎ ৫৩ বছরে নিহত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। সেই তুলনায় শেখ হাসিনার অনেক কম মেয়াদের শাসনামলে বিগত দেড় দশকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রায় অর্ধকোটি মানুষ মামলা ও হামলারও শিকার হয়েছেন। কয়েক হাজার নেতাকর্মী খুন গুম হয়েছেন, অনেকে হয়েছেন বিচারিক হত্যাকান্ডের শিকার। এদের অনেকেই বিপর্যস্ত অসুস্থ ও পঙ্গুপ্রায়।
ঠিক আয়নাঘর থেকে ১০/১২ বছর পর মুক্তি পাওয়া আরমান, আজমীসহ অন্যান্য বন্দীদের মতো, যারা বছরের পর বছর সীমাহীন নির্যাতনের মধ্যে কাটিয়েছেন পৃথিবীর মুক্ত আলো বাতাস থেকে বঞ্চিত ছিলেন জীবনের একটি দীর্ঘ সময়। বন্দী অবস্থায় অনেকের জীবন ঝরে গেছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের আয়নাঘর ও সিরিয়ার বন্দী শালাগুলোতে এক্ষেত্রে একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়। সিরিয়ায় নারী বন্দীরা যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তা অবর্ণনীয়। একজন নারীকে ১০/১২ জন সৈন্য যৌন নির্যাতন করেছে, আসাদ বাহ্যিকভাবে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সমর্থক দেখালেও তার বন্দীশালায় ফিলিস্তিনী আটক ছিলো। জর্ডানে আশ্রয় নেয়া বহু ফিলিস্তিনী সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সিরিয় কারাগারে। দেখা গেছে, পালিয়ে যাবার আগে উভয় স্বৈশাসকই খুব বেশী সময় হাতে পাননি প্রস্তুতি গ্রহণের। অনেকটা তড়িঘড়ি করে জীবন বাঁচাতে পালাতে হয়েছে তাদের। উভয়ের বিমানেরই ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রাখা হয়, বিমানটিকে যাতে কেউ আকাশে সনাক্ত করতে না পারে সেইজন্য। এখন ভারতে বসে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচারের সুযোগ পেলেও বাশার আল আসাদের ক্ষেত্রে এমন কিছু লক্ষণীয় নয়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পলাতক অবস্থায় বন্ধু দেশে থাকলেও সেখান থেকে নিজ দেশে ক্ষমতায় ফেরা হাসিনা কিংবা বাশারের কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ পতিত স্বৈরাচারের ক্ষমতায় ফেরার নজির বিশ্বে নেই বললেই চলে। তাই এখন হাসিনার অনুসারী ও সমর্থকরা যতোই লম্ফ ঝম্প ও আশাবাদ ব্যক্ত করুক না কেনো, হাসিনার পুনরায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসীন হওয়া কোন বিবেচনায়ই সম্ভব নয়। একই কথা খাটে আসাদের ক্ষেত্রেও। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, দেশের জনগণের হাতে একবার পতন ঘটলে সেই শাসককে আবার মেনে নেয় না কোন দেশের জনগণই।