বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক মোড়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:০১ অপরাহ্ন
হাইকোর্টের প্রদত্ত এক ঐতিহাসিক রায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক জগতের বিশেষভাবে নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি বড়ো ধরনের জটিলতা ও সংকট মুক্তির সূচনা হয়েছে। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার কর্তৃক অবৈধভাবে বাতিল করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় ফিরে এসেছে। সম্প্রতি পঞ্চদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১৯ আগস্ট জারি করা রুলের উপর শুনানি শেষে গত ১৭ ডিসেম্বর এই আদেশ দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত এই বেঞ্চ রায়ের পর্যবেক্ষণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তারা বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছিলো।
জনস্বার্থে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৯ আগস্ট সুজন’র সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি রীট করেন। এই রীটে পরবর্তীতে বিএনপি ও জামায়াতও যুক্ত হয়। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, বাহাত্তরের মূল ৪ নীতি ফিরিয়ে আনা এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানসহ অনেকগুলো পরিবর্তন আনা হয়েছিলো। শুধু তাই নয়, ওই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১৫৩ টির মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ অনুচ্ছেদকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলো সংশোধন অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় মিডিয়ায় ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির বিধান বাতিল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের অগণিত নেটিজেন এটাকে স্বাগত জানিয়ে মন্তব্য করেন। নিজাম উদ্দীন নামে জনৈক ব্যক্তির মন্তব্য হচ্ছেঃ বিচারক কোর্ট এখন মুজিব কোটের পকেটে নেই, আদালতের ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত হিসেবে মাইল ফলক হয়ে থাকবে। আদালত চলবে আইনের গতিতে, সরকার চলবে সংবিধানের গতিতে। আগামীর ভবিষ্যত যেনো এরকমই থাকে। তামজিদ নামক জনৈক ব্যক্তি বলেন, দেশ ও জনগণের অনুকূলে সঠিক রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে দেশের আসল মালিক জনগণের মতামত তথা গণভোটের বিধান সংযুক্ত করা একটি যুগান্তকারী দৃঢ় ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। উচ্চ আদালতের প্রতি সশ্রদ্ধ অভিবাদন। আবুল কাসেম নামক অপর এক নেটিজেন লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন ধ্বংস করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে। শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য ছিলো বংশ পরম্পরায় চিরকাল ক্ষমতায় থাকা। জনরোষের কবলে পড়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনলেন শেষ পর্যন্ত। জনৈক আনোয়ারুল হক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ইতিবাচক ব্যবস্থা। আদালতের রায়কে শ্রদ্ধা ও সমর্থন জানাই।
এসবই হলো সাধারণ সচেতন জনগণের অভিমত ও মন্তব্য। এই মামলার বিএনপি পক্ষের আইনজীবীদের একজন দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, আদালতের আজকের রায়ের ফলে ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া যেই অবস্থা রেখে গিয়েছিলেন সেই অবস্থায় ফিরলো সংবিধান।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের এক প্রকারের শাসন ব্যবস্থা, যার অধীনে দু’টি নির্বাচিত সরকারের মধ্যবর্তী সময়কালে সাময়িকভাবে অনির্বাচিত ব্যক্তিবর্গ কোন দেশের শাসনভার গ্রহণ করে থাকেন। সাধারণত নির্বাচন পরিচালনা করাই এর প্রধান কাজ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং কোন সাংবিধানিক সংশোধনী ছাড়াই ১৯৯০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া সরকার ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে প্রণয়ন করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার অবৈধভাবে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে চরম নিন্দার পাত্রে পরিণত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা ছিলো অগ্রণী। সর্বপ্রথম কেয়ারটেকার সরকারের নামে নির্বাচনকালীন এই ব্যবস্থা চালুর দাবি উত্থাপন করেন তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে। আমরা এই যুগান্তকারী সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসাকে স্বাগত জানাচ্ছি।