সিলেটে প্যাকিং হাউস স্থাপনের দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:৩০ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মিডিয়ায় ‘সিলেট থেকে যে কারণে পণ্য রপ্তানী হচ্ছে না লন্ডনে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিলেট থেকে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য রপ্তানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলে উৎপাদিত সাইট্রাস জাতীয় ফল, সবজি ও বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্যের মূল ক্রেতা হচ্ছেন সিলেটের প্রবাসীরা। রপ্তানির এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় অত্যাধুনিক কার্গো কমপ্লেক্স। কিন্তু কুলিং হাউস সম্বলিত ‘প্যাকিং হাউস’ না থাকায় সিলেট থেকে কোন ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কোন কাজেই আসছে না ১শ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই কমপ্লেক্স।
ব্যবসায়ীদের মতে, মাত্র ২-৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরের আদলে ‘প্যাকিং হাউস’ স্থাপন করা গেলে সিলেট থেকে প্রচুর পরিমাণ কৃষি ও কুটির শিল্প পণ্য রপ্তানি সম্ভব। ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটে উৎপাদিত শিম, নাগা মরিচ, খাসিয়া পান, থৈকর, ফরাস ও শিমের বিচি, ঢাকাদক্ষিণের কচুমুখী ও লতি এবং সাইট্রাস ফল অর্থাৎ লেবু জাতীয় ফল যেমন জারা লেবু ও সাতকরার প্রচুর চাহিদা রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে যেসব দেশে সিলেটী প্রবাসীরা আছেন তাদের কাছে এসব পণ্যের কদর বেশী। সিলেটী অধ্যুষিত এলাকার সুপারসপেও এসব পণ্যের ব্যবসা ভালো। সিলেট থেকে রপ্তানির সুযোগ না থাকায় বর্তমানে ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে এসব পণ্য রপ্তানি করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওসমানী বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সটি ঢাকার চেয়েও আধুনিক। ১শ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কমপ্লেক্সটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাও উন্নতমানের। কার্গো কমপ্লেক্সে বসানো হয়েছে আধুনিক এসক্লুসিভ ডেডিকেশন সিস্টেম (ইডিসি) স্ক্যানার মেশিন। সর্বোপরি কার্গো টার্মিনাল ও কমপ্লেক্স তৈরী হওয়ায় সিলেট থেকে পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা বেড়েছে। বর্তমানে ব্যবসায়ীদের ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে। তাদের মতে, সিলেটে একটি প্যাকিং হাউস করা গেলে ব্যবসায়েিদর আর ঢাকা ও চট্টগ্রামে দৌড়াতে হবে না। সিলেট থেকেই কৃষিপণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এতে স্থানীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও মান বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত অপর একটি সংবাদে বলা হয়েছে, গোয়ালগাদা এক ধরনের শিম, যার উৎপাদন কেবল সিলেট অঞ্চলেই। তবে এর বিপনন সিলেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, দেশ ছাড়িয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হয় বিশেষ জাতের এই শিম। কিন্তু সিলেটে কোন সরকারী প্যাকিং হাউস না থাকায় কাজে লাগানো যাচ্ছে না এর পূর্ণ সম্ভাবনা। লক্ষণীয় যে, গত কয়েক বছর থেকে গোয়ালগাদা শিম রপ্তানি হচ্ছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত রপ্তানি হয় এই শিম। গত বছর প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার কেজি শিম রপ্তানি হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ৫২ ধরনের সবজি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। ফল যাচ্ছে ৪২ ধরনের। তবে ওই বাজারে পণ্য পাঠাতে হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত অনুযায়ী ‘গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস বা গ্যাপ’ অনুসরণ করে পাঠাতে হয়। আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে প্যাকেজিংয়ের পর সেটি রপ্তানিযোগ্য হয়। এক্ষেত্রে বড়ো সুবিধা দিচ্ছে রাজধানীর শ্যামপুরের সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজটি। সিলেটেও যদি এ ধরনের একটি প্যাকিং হাউস স্থাপন করা হয়, তবে সিলেট অঞ্চলের কৃষিপণ্য রপ্তানিতে রীতিমতো জোয়ার আসবে, এমন আশাবাদ সংশ্লিষ্ট সকলের।