সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশকে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:২৫ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী ক্ষুদ্র মুসলিম দেশ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে দেশটির বিরোধীদের নিয়ে ‘নীলনকশা’ তৈরী করেছিলো ভারত। বিষয়টির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে এই সংবাদ মাধ্যম। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চীনপন্থী মুইজ্জু মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ভারতের বলয় থেকে বেরিয়ে চীনের সঙ্গে কূটনীতি সম্পর্ক বাড়ানোয় তৎপর হয়ে ওঠেন। এমনকি মালদ্বীপে থাকা ভারতীয় সেনাদের ফিরিয়ে নিতে ভারত সরকারকে সময়সীমাও বেঁধে দেন তিনি। এছাড়া বেইজিংয়ের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতামূলক চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে সরিয়ে দিতে মালদ্বীপের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা শুরু করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর পক্ষে কাজ করা এজেন্টরা। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, সম্প্রতি তাদের হাতে ডেমোক্রেটিক রিনিউয়াল ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক একটি অভ্যন্তরীণ গোপন নথি এসেছে। নথিতে দেখা গেছে, মালদ্বীপের বিরোধী রাজনীতিকেরা মুইজ্জুর নিজ দলের সদস্যসহ ৪০ আইন প্রণেতাকে ঘুষ দিয়ে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রস্তাব দেয়। এছাড়া মুইজ্জুর উৎখাত নিশ্চিত করতে ১০ জন উর্ধ্বতন সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং তিনটি প্রভাবশালী অপরাধী চক্রকে অর্থ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। বিভিন্ন পক্ষকে ঘুষ দেয়ার জন্য র- এর এজেন্টরা ৮ কোটি ৭০ লাখ মালদ্বীপি রুপিয়া সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীরা মুইজ্জুকে অভিশংসনের জন্য যথেষ্ট সমর্থন জোরদারে ব্যর্থ হয়।
উপরোক্ত ঘটনা থেকে প্রতিবেশী ছোট ছোট দেশগুলোর প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গী তথা কূটনীতি বা পররাষ্ট্রনীতি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। মালদ্বীপের ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে, ২০২৩ সালের শেষের দিকে ক্ষমতায় বসা মুইজ্জু ভারতের আধিপত্যবাদী পররাষ্ট্রনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ান। তিনি ‘ইন্ডিয়া আউট’ শ্লোগান নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। অর্থ মানে হচ্ছে মালদ্বীপের জনগণ বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের আধিপত্যবাদী ব্রিগব্রাদারসুলভ ও ঔপনিবেশিক শোষণমূলক আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলো। তারা ভারতের স্থায়ী নিগড়ে বন্দী হওয়ার শংকা থেকে ভারত বিরোধীতায় অবতীর্ণ হয়। মুইজ্জুর ভারত বিরোধী দলকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। কিন্তু এটা মেনে নিতে পারেনি ভারতের বিজেপি সরকার। তারা অবৈধ পন্থায় মুইজ্জুকে ক্ষমতাচ্যুত করার চক্রান্ত করে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় শাসক শহীদ জিয়াউর রহমানকে নৃশংসভাবে ক্ষমতা থেকে সরানোর পেছনেও ভারত একই ধরনের চক্রান্ত করেছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ তার লেখা গ্রন্থে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। একথা দিবালোকের মতো পরিস্কার যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি ও তার নেতা ভারতপন্থী। এরশাদ ও তার মৃত্যুর পর থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ও তার নেতাদের আচরণ থেকে তাদের ভারতপ্রীতি ও ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দলটির তৎপরতা গোটা দেশের সচেতন মানুষের কাছে প্রতীয়মান। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদেরের ভারত গমন ও পরবর্তী সময়ে তার রহস্যময় কথাবার্তা ও আচরণ থেকে দলটির ভারত কানেকশন স্পষ্ট। যা-ই হোক, বর্তমান ভারত সরকার তাদের ঔপনিবেশিক পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রতিবেশী ক’টি দেশ থেকে বিতাড়িত। আর সর্বশেষ বিতাড়নের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত উচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে। ইতোমধ্যে ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও ভারত আজো বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নেয়নি, নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে। এ অবস্থায় ভারত ও তার গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ যে ডঃ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের বহুমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নয়, একথা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন না। তবে ভারত সরকার বর্তমান আচরণ থেকে স্পষ্ট যে, তারা বাংলাদেশের দৃঢ়চেতা ও দেশপ্রেমিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। তারা চাইছে তাদের ‘সেবাদাসী’ হাসিনার মতো কোন শাসক ও তার নেতৃত্বাধীন কোন সরকারকে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সরকার তথা শীর্ষ নেতৃত্বকে ভারতের ব্যাপারে ডাবল সতর্কতা অবলম্বন অপরিহার্য।