৬ মাস জ্বালানী তেলের দাম বাড়বে না
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:১৩ অপরাহ্ন
জাতীয় মিডিয়া ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে’ জ্বালানী তেল সংক্রান্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া জ্বালানী তেল আমদানির ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম খাতে ২০২৫ সালের প্রথম ৬ মাসে প্রায় ৭৬০ কোটি সাশ্রয় হবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি)।
টেন্ডার শর্ত শিথিলকরণ ও ব্যাপক দরকষাকষির মাধ্যমে সরবরাহকারী পরিবহন খরচ কমানোর ফলে এই সাশ্রয় হবে। এর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে জ্বালানী তেলের দাম না কমলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে বর্ধিত ব্যয়ের বোঝা থেকে রেহাই দেয়া যাবে বলে মনে করছেন বিপিসি কর্মকর্তারা।
লক্ষণীয় যে, বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঘোষণা করেন যে, জ্বালানী খাতে ভর্তুকি কমাতে প্রতি মাসেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে তেল-গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এখন থেকে প্রতি মাসেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে তেল গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। তখন জ্বালানী বিশেষজ্ঞ ডঃ এজাজ হোসেইন বলেন, আমাদের দেশে দেখা গেছে, যখন জ¦ালানী তেলের দাম খুব কমে যায়, সরকার দামটা সমন্বয় করে না। ফলে ভোক্তারা দাম কমে যাওয়ার সুবিধা পায় না। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে সরকার কিন্তু সাথে সাথে দাম বাড়িয়ে দেয়। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে জ্বালানী খাত নিয়ে যে তেলেসমাতি হয়েছে, তা দেশের সকল মানুষ অবগত। সরকারের শীর্ষ মহলের পছন্দমতো জ্বালানী সরবরাহকারী নিয়োগ দেয়া হতো। ফলে তাদের সার্ভিস চার্জ বা প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দেখানো হতো। এ নিয়ে দর কষাকষির কোন সুযোগ ছিলো না। আর এই বাড়তি সার্ভিস চার্জ বা কমিশনের খেসারত হিসেবে সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা দিতে হতো। সরকারের ঘনিষ্ঠজন অর্থাৎ অলিগাররা এভাবে হাতিয়ে নিতো বিপুল অর্থ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই দুর্নীতি বন্ধ করায় এখন বিপুল অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিপিসি’র তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে মোট ২৫.৬ লাখ টন জ্বালানী তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কর্পোরেশন। এর মধ্যে প্রিমিয়াম তথা সার্ভিস চার্জ নিয়ে দরকষাকষির মাধ্যমে প্রায় ১৪ লাখ টন পরিশোধিত জ¦ালানী তেল কেনা হবে। সংশোধিত প্রিমিয়ামের ফলে গত ৬ মাসে কেনা বিভিন্ন ধরনের জ¦ালানী তেলে ইউনিট প্রতি কমপক্ষে ২ ডলার থেকে ৩.৯৮ ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় হবে।
সর্বোপরি জ্বালানী খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের লাগাডম টেনে ধরার ফলে বিপিসি’র লোকসান কমে সাশ্রয় হচ্ছে বড়ো অংকের অর্থ। বিপিসি’র চেয়ারম্যান মোঃ আমিন উল আহসান বলেন, এবারের আন্তর্জাতিক দরপত্র খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ ছিলো। কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে। যেমন, যাদের (সরবরাহকারী) রিফাইনারি নেই, তারা সরবরাহ করতে পারবে না-আমরা সেটা তুলে দিয়েছি, সহজ করে দিয়েছি। ভালো ট্রেডার হলে, রিফাইনারি না থাকলেও সরবরাহ করতে পারবে। তিনি আরো বলেন, আগের দরকষাকষির সময় অনেক বকেয়া থাকতো। এ কারণে তারা বকেয়া নিয়ে চাপ দিতো। এবার বকেয়া না থাকায় শক্তভাবে দরকষাকষি করা গেছে। জ¦ালানী তেলের আন্তর্জাতিক দর এবং প্রিমিয়াম ব্যয় হিসেব করেই গ্রাহক পর্যায়ে জ্বালানীর মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এখন যে পরিস্থিতি, বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে জ¦ালানী তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় ছিলো না। ব্যয় সংকোচন ও সাশ্রয়ের ফলে আপাতত নতুন করে জ্বালানী তেলের দাম না বাড়ালে চলবে। তিনি বলেন, এভাবে দরকষাকষি আমদানি ব্যয় কমাতে ও দেশীয় বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই ব্যয় সাশ্রয়ের ফলে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে গ্রাহক পর্যায়ে জ¦ালানীয় তেলের মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।
উপরোক্ত ঘটনাটি যেমন স্বস্তিকর তেমনি গ্রাহক পর্যায়ে আশাব্যঞ্জক। অথচ স্বৈরশাসক হাসিনা যখন তখন জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির হুমকি দিতো, মূল্যবৃদ্ধি করতো। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিতো। জনগণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর উচ্চমূল্য পরিশোধ করা সত্বেও এই খাতে সাশ্রয় দূরে থাক, ঘাটতি কখনো দূর হতো না। আর এজন্য দায়ী ছিলো সরকারের শীর্ষ মহলের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট। দুর্নীতিবাজ সরকারের পতনের পর এই খাতে এখন শৃংখলা ফিরে আসতে শুরু করেছে। উপরের বিষয়টি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দেশবাসী সকল খাতে এমন সুনীতি ও সুশৃংখলা কামনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে।