সিলেটের পর্যটন শিল্পের বড়ো বাধা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:৫০ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় সিলেটের পর্যটন শিল্প সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিলেটের পর্যটন বিকাশের মূল বাধা সড়ক যোগাযোগ। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যটকদের প্রত্যাশা ও প্রশান্তির সবচেয়ে বড়ো অন্তরায়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হোটেল মোটেলসহ সিলেটের অর্থনীতিতে।
লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের মধ্যে অনুপম জনপদ সিলেটের পর্যটকদের মনে যেভাবে সাড়া জাগায়, অন্য জেলার ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। দারুণভাবে বৈশিষ্টপূর্ণ সৌন্দর্য্যই হয়তো সিলেটের গরিমা। সেই ভালো লাগা থেকে ১২ মাস সুযোগ না হলেও বছরে অন্তত একবার সিলেটে মানুষের ভিড় জমে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তারা ছুটে আসেন, ঘুরে দেখেন পছন্দের শহরের প্রকৃতিকে। তবে পর্যটকদের সিলেট দেখার এই আনন্দকে ম্লান করে দিচ্ছে বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্টদের মতে, সিলেটে অন্তত ৪ শতাধিক হোটেল রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু গেষ্ট হাউস ও মোটেল। বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে বেশ কঠিন সময় পার হয়েছে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। তারপর এলো জুলাই-আগস্টের উত্তাল সময়। বর্তমানে সিলেটে প্রচুর পর্যটক আসা-যাওয়া করলেও এই ¯্রােত ধরে রাখা যাচ্ছে না। তার প্রধান কারণ অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। দুই তিনটি পর্যটন স্পট ছাড়া অধিকাংশ এলাকায় একবার গেলে আর দ্বিতীয় বার যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না পর্যটকেরা। অথচ একটি পর্যটন কেন্দ্রের মূল হলো তার আকর্ষণ করার ক্ষমতা। পর্যটক একবার গেলে মুগ্ধ হয়ে বার বার আসবে এটাই একটি পর্যটন কেন্দ্রের স্বার্থকতা। কিন্তু সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো এতো সৌন্দর্যের আধার হলেও পর্যটকেরা একবার এসে আবার আসতে চাইছেন না শুধু যোগাযোগের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে। আর এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা, ব্যর্থতা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অনন্য সুন্দর জাফলংয়ের অবস্থান। যাকে প্রকৃতিকন্যাসহ নানা নামে আখ্যায়িত করা হয়। সিলেট নগরী থেকে জাফলংয়ে যাওয়ার পথে বার বার পর্যটকদের মন খারাপ হয় শুধু সড়কের জন্য। আরামকে হারাম করে দেয় সমস্ত যাত্রা পথ। পর্যটকদের ভালো লাগার আরেক নাম বিছনাকান্দি। একই উপজেলার এই জায়গাটির যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। সড়কের অবস্থা এতোই বেহাল যে, সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় হেলে দুলে যেতে হয় মান্দাতা আমলের যানবাহনের যাত্রার মতো। দিনের বেলা কষ্ট করে পৌঁছলেও ফেরার সময় রাতের বেলা থাকে দুর্ঘটনার সীমাহীন ঝুঁকি। সিলেট নগরীর জনৈক হোটেল ম্যানেজার বলেন, টেকসই উন্নয়ন না হলে সিলেটে পর্যটন শিল্প কোনদিন বিকাশিত হবে না।
এই টেকসই উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলা যায়, বিগত স্বৈরশাসক হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে অগণিত মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বড়ো ধরণের কোন প্রকল্প গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করা হয়নি। দেশের জরাজীর্ণ ও প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত সড়ক ব্যবস্থাকে একটি আধুনিক সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় এনে পুনর্গঠনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সেতু, ট্যানেল কিংবা বিশেষায়িত সড়কপথ নির্মাণ করে দেশের সড়ক যোগাযোগ করে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকৃত উন্নয়ন যে অসম্ভব, এটা বিবেচনা করেনি এই স্বার্থান্বেষী ও লোভী সরকার। তারা শুধু ঐসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন যেগুলোতে বেশি অর্থ লুটপাট করা যায়, এ ক্ষেত্রে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ছিলো তাদের কাছে গৌন। অনেকের মতে, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী ট্যানেল ইত্যাদি করার আগে দেশের ভাঙ্গাচোরা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি ব্যাপক উদ্যোগ ও বড়ো প্রকল্প গ্রহণ করা ছিলো জরুরি। কিন্তু তারা তা করেনি। কারণ এক্ষেত্রে লুটপাটের সুযোগ কম, কাজ করতে হবে বেশি এবং বেশি দিন ধরে। এভাবে গণবিরোধী হাসিনা সরকার শুধু যোগাযোগ খাতে লক্ষ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। অপরদিকে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে আছে দেশের সড়কগুলো। এর সাথে মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন খাত। সামগ্রিকভাবে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে পর্যটনস্থল বা কেন্দ্রগুলোতে যাতায়াতের রাস্তাগুলোরও সংস্কার ও উন্নয়ন হতো। এর ফলে বিকশিত হতো দেশের পর্যটন শিল্প। কিন্তু তা হয়নি। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের উচিত সিলেটসহ দেশের পর্যটন শিল্পখাতের এই বড়ো সমস্যাটি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। আমরা এ বিষয়ে পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।