আগুনের বিভীষিকা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৫:৪০ অপরাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানল যখন বিশে^র সকল সচেতন মানুষের মাঝে আতঙ্কের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছে, তখন সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকা-ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে অগ্নিকা- মানুষের মাঝে এক আতঙ্কের বিষয় হয়ে ওঠেছে। দিন তিনেক আগে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর ঢাকার হাজারীবাগে ঘটে এক ভয়াবহ অগ্নিকা-। গত ১৭ জানুয়ারি সংঘটিত এই অগ্নিকা-ে প্রাণহানি না ঘটলেও আগুন সংশ্লিষ্ট ভবনের ৫, ৬ ও ৭ তলায় ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা শর্ট সার্কিট কিংবা সিগারেটের কারণে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এছাড়া গতকাল চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে আগুনে পুড়ে ৯টি দোকান, এতে ক্ষতি হয় ৩০ লাখ টাকার।
বলা বাহুল্য, দেশে প্রতি বছর অগ্নিকা-ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দেখা যায়, ঢাকার বস্তিগুলোতে প্রায়ই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এছাড়া পোশাক কারখানা ও পুরোনো ঢাকার রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের বিভৎস রূপ দেখেছেন দেশবাসী। বাংলাদেশে নিকট অতীতে যেসব ভয়াবহ অগ্নিকা- সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু ঘটনা ছিলো সবচেয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী। এগুলো হচ্ছে, ২০২০ সালে নারায়নগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট অগ্নিকা-, ২০২১ সালের মগবাজার বিস্ফোরণ, ২০২৪ সালে সচিবালয়ের অগ্নিকা-, এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকা-, চকবাজার, তাজরীন ফ্যাশন, নিমতলি, বঙ্গবাজার, বেইলী রোড, রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকা-, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে সংঘটিত অগ্নিকা- এদেশের জনপদের মনে দুঃসহ ও ভীতিকর স্মৃতি হয়ে যায়। এসব অগ্নিকা-ে যেমন বহু লোকের প্রাণহানি ঘটেছে, তেমনি হাজার কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লসঅ্যাঞ্জেলেসে সংগটিত অগ্নিকা-টি কোন সাধারণ অগ্নিকা- না হলেও এবং এটাকে ওয়াই- ফায়ার বা দাবানল হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও বিশ^জুড়ে অগ্নিকা-ের বিষয়টি এখন সবাইকে নাড়া দিচ্ছে। অন্তত আগুণের সূত্রপাত সেভাবেই হোক, তা নেভানোর বিষয়টি এখন গুরুত্ব পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে। এতো বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশ হওয়া সত্বেও যুক্তরাষ্ট্র কোনো লসঅ্যাঞ্জেলেসের অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ এ নিয়ে বিশ^ব্যাপী আলোচনার পাশাপাশি গবেষণাও শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর এতো অগ্নিকা- এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়, যা কোনভাবেই ছোট করে বা অবহেলার চোখে দেখার অবকাশ নেই। বাংলাদেশে যেহেতু অগ্নিনির্বাপনের পর্যাপ্ত আধুনিক সরঞ্জাম নেই, তাই অগ্নিকা- নেভানোর চেয়ে অগ্নিকা- যাতে সংঘটিত না হয় অর্থাৎ প্রতিরোধের দিকে বেশি নজর দেয়া উচিত। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ ভাগ্যবান। কিন্তু এদেশে অগ্নিকা-ের কারণ গুলোর অধিকাংশই মানব সৃষ্ট তথা মানুষের অবহেলা ও গাফলাতির কারণের হয়ে থাকে। যেমন, বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যুগ যুগ ধরে বৈদ্যুতিক ক্যাবল ব্যবহার করা হলেও সেগুলো না বদলানো, সিগারেটের জ¦লন্ত শেষাংশ যেখানে সেখানে নিক্ষেপ, ত্রুটিপূর্ণ নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার ও সেগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি পরীক্ষা না করা, মশার কয়েলের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার, অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ও গ্যাস সংযোগ ইত্যাদি।
দেখা যাচ্ছে, এগুলোর সবক’টি কারণই সংশ্লিষ্ট লোকজনের অবহেলা ও গাফিলতি থেকে সৃষ্ট বা কৃত। সামগ্রিক দিক দিয়ে অগ্নিকা-কে নগরায়নের অন্যতম অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের অগ্নিকা- শুধু শহর বা নগরীতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর ভয়াল থাবা গ্রামাঞ্চলেও বিস্মৃত হতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা খুবই অপর্যাপ্ত ও দুর্বল। বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের ভাবনা চিন্তা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা কামনা করি।