বিনা মেঘে বজ্রপাত বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৫:৩৮ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ভারতীয় মিডিয়া ‘দ্য হিন্দু’ ম্যাগাজিন ‘বাংলাদেশে যেনো বিনা মেঘে বজ্রপাতের মুখে পড়েছে আদানি পাওয়ার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের বিলিয়নার ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি পাওয়ার কোম্পানী বর্তমানে একাধিক সমস্যার মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিতর্ক, বিপুল বকেয়া পাওনা এবং অতিরিক্ত বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে অনিশ্চয়তা-সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কঠিন অবস্থায় রয়েছে।
সচেতন মহলের মতে, আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের নামে যে অন্যায় অসম ও শোষণমূলক চুক্তি করেছিলো স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সহায়তায়, তা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন ডঃ ইউনুসের সরকারের পুনর্বিবেচনার মুখে পড়েছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারত তোষণ নীতির আওতায় শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ গৌতম আদানির আদানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি করে। আদানি চুক্তি ছিলো যেমন শোষণমূলক এবং বাংলাদেশের জন্য আর্থিক দিক দিয়ে মারাত্মক ক্ষতিকর তেমনি নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই আদানির সঙ্গে এই রহস্যময় ও গোপন চুক্তি নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্ন ওঠে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ইনস্টিটিউট অব অ্যানার্জি ইকোনোমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইফা) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশকে ২৫ বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হবে। এই বিদ্যুৎ চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী অনেকগুলো বৈষম্যমূলক শর্ত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর এমনকি কোন বিদ্যুৎ আমদানি না করলেও বাংলাদেশকে প্রতি বছর ৪৫ কোটি ডলার অর্থাৎ সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রদান করতে হবে, যা এ ধরনের অন্যান্য চুক্তির তুলনায় অনেক বেশী। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ আগামী ২৫ বছরের জন্য আদানি পাওয়ারের করের বোঝা বহন করবে, যে বোঝা থেকে ভারতীয় কোম্পানী ছাড় পেয়েছে নিজ দেশের সরকারের কাছ থেকে। কর ছাড়ের কারণে আদানির এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশী অর্থ বেঁচে যাবে। কিন্তু সেই কর বাংলাদেশকে দিয়ে যেতে হবে আদানিকে। এছাড়া প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কয়লার দাম অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। এই চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটন, ডেইলী স্টার ও দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বক্তব্য ও মূল্যায়ন থেকে এটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে যে, চুক্তিটি করা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বার্থকে উপেক্ষা করে আদানি গ্রুপকে বিপুল আর্থিক মুনাফা প্রদান করার জন্য এবং এতে বাংলাদেশের জ¦ালানী-নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতের নিয়ন্ত্রণ আরো জোরদার হবে।
বলা বাহুল্য, শুধু আদানির বিদ্যুৎ চুক্তিই নয়, গত দেড় যুগে ভারত ও ভারতীয় ব্যবসায়ী-লোকজন বাংলাদেশ থেকে অন্যায় ও অসম পন্থায় যে আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে, তার পরিমাণ কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু তাদের তাঁবেদার সেবাদাসীতূল্য হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাবার পর বহুলাংশে বন্ধ হয়ে গেছে এসব অবারিত সুযোগ। মহা লুটপাটের চুক্তি আদানির চুক্তি বাতিল বা পুনর্বিবেচনার ভয়ে ভীত শুধু এই কোম্পানীই নয়, ভারতও। কারণ আদানি গ্রুপের উত্থান পতনের সাথে ভারতের অর্থনীতি বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে। এছাড়া বর্তমান বিজেপি সরকারের আর্থিক সহায়তায় বড়ো উৎস এই আদানি গ্রুপ।
বিগত বছরগুলোতে ভারত বাংলাদেশের সাথে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে। পাকিস্তান কিংবা অন্যান্য দেশের সাথে ব্যবসা করতে দেয়নি বাংলাদেশকে। ফলে নানা পণ্য নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটিয়ে হাজারো কোটি টাকা লুটে নিয়েছে ভারত। শুধু পেঁয়াজ নিয়ে বিগত বছরগুলোতে ভারত যা করেছে, তা এদেশের ভুক্তভোগী মানুষ কোনদিন বিস্মৃত হবে না।এ রকম আরো অনেক বহু খাত আছে, যেগুলোকে ব্যবহার করে ভারত অন্যায্য ও অন্যায় ফায়দা নিয়েছে। ঢাকা বিমান বন্দরে রাডার সিস্টেমের দুর্বলতা কিংবা রাডার সিস্টেমকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করে রেখে আকাশ পথের হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হাতিয়ে নিয়েছে ভারত। ভারতীয় অগণিত নাগরিক ভিজিট ভিসায় এসে বছরের পর বছর এদেশে চাকুরী করে বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে অবৈধভাবে। এসব এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তা-ই ভারতীয় পত্রিকা দ্য হিন্দুর ভাষায় এটা ভারতের ওপর বিনা মেঘে বজ্রপাতের শামিল। প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ আয় ও ফায়দা হাসিল যে চিরদিন স্থায়ী হয় না, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রতিটি দেশের এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়ার কিছু না কিছু আছে, এমন অভিমত সচেতন মহলের।