রমজানে পণ্য মূল্যে সুসংবাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:৫৬ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘পাকিস্তান থেকে খেজুর, কমলাসহ ফল আমদানিতে বড়ো সম্ভাবনা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রোজাসহ সারা বছরের চাহিদা মেটাতে পাকিস্তান থেকে খেজুর ও কমলার পাশাপাশি অন্যান্য ফল ও কৃষি পণ্য আমদানিতে বড়ো সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকগণ। পাশাপাশি পাকিস্তানে বাংলাদেশী বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এজন্য দু’দেশের মধ্যে শুল্ক-অশুল্ক বাঁধাসমূহ দূর করার আহবান জানিয়েছেন উভয় দেশের ব্যবসায়ীবৃন্দ। এফবিসিসিআই’র প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, রমজান মাসে বাংলাদেশে খেজুরের প্রচুর চাহিদা থাকে। পাশাপাশি অন্যান্য ফলের চাহিদাও এ সময় বেড়ে যায়। এছাড়া বছর জুড়েই স্থানীয় বাজারে দেশি-বিদেশী ফলের বেশ চাহিদা থাকে। বাংলাদেশের জন্য ফল ও কৃষি পণ্যের সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য উৎস হতে পারে পাকিস্তান।
সম্প্রতি ঢাকায় এফবিসিসিআই এবং পাকিস্তানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ এবং সম্প্রসারণের জন্য লজিস্টিক্স সাপ্লাই চেইন, কোল্ড স্টোরেজ, প্যাকেজিং এবং পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দেন উভয় দেশের ব্যবসায়ীগণ।
শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারতের সাথে বাণিজ্যের বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ করা হয়। হাসিনার ব্যক্তিগত ও দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখার জন্য শুধু ভারত থেকেই বিভিন্ন পণ্য আমদানির নীতি গ্রহণ করে। ভারতকে একচেটিয়া বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে লাভবান করার লক্ষ্যে এমনটি করা হয়। এজন্য বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরকে প্রায় সকল পণ্য ভারত থেকেই আমদানির নির্দেশ বা লাইসেন্স দেয়া হয়। দেশের নিত্যপণ্যসহ সকল পণ্য আমদানির লাইসেন্স দেয়া হয় সরকার দলীয় ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। এর ফলে একটি ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। তারা শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, আমদানির দেশের অর্থাৎ ভারতের ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশ করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। ফলে পঞ্চাশ টাকার পেঁয়াজ আড়াইশ টাকায় পৌঁছে যায়। একইভাবে ভোজ্য তেলের দাম প্রতি মাসে বাড়ানো হয়। ৮০/৯০ টাকায় আমদানি করা চিনি বিক্রি করা হয় ১৩০-১৮০ টাকায়। এভাবে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনকি মাঝে মাঝে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকটের দরুন দেশের সাধারণ সীয়মিত আয়ের মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে যায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় এসবই হয় ক্ষমতার শীর্ষ মহলের ছত্রছায়ায়, পৃষ্ঠপোষকতায়।
কিন্তু গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক হাসিনা ও সরকারের পতনের পর থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় অনেক পণ্যের দাম ইতোমধ্যে অনেক হ্রাস পেয়েছে। এক্ষেত্রে পেঁয়াজের কথা সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয়। অন্যান্য অনেক পণ্যের দাম কমেছে কিংবা আর বাড়েনি, যদিও এগুলো ছিলো ক্রমাগত বৃদ্ধির ধারায়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সাথে অতীতের কারসাজিমূলক একচেটিয়া ব্যবসার পরিবর্তে পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, মিশর ও মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি শুরু করেছে। এতে প্রতিযোগিতামূলক অনেক কমমূল্যে পণ্য আমদানি সম্ভব হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাকিস্তান থেকে প্রচুর পণ্য আমদানি করা হয়েছে। অথচ ভারত তার ঔপনিবেশিক শোষণমূলক একচেটিয়া ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে স্বাভাবিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে দেয়নি। এমনকি কোন পাকিস্তানী বাণিজ্যিক জাহাজ সরাসরি বাংলাদেশের কোন বন্দরে আসার অনুমতিও পায়নি গত ১৬ বছর।
স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সরকার নানা অজুহাতে পাকিস্তানের সাথে স্বাভাবিক ব্যবসা বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। অনেকের মতে, ভারত তোষণ নীতির কারণেই এটা করা হয়েছে। যা-ই হোক, বর্তমান ছাত্র-জনতার সরকার হাজার হাজার মানুষের জীবনের বিভিন্ন ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও তাদের পুতুল হাসিনা সরকারের পতন পরবর্তী দেশ শাসনের অধিকার লাভ করেছে। এর ফলে এদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে এখন গতি আসছে, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য অনেক কমেছে। এতে অনেক পণ্যের দামও কমেছে। অনেক ক্রমবর্ধমান পণ্যের দাম আর বাড়ছে না। পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে স্বাধীনভাবে পণ্য আমদানির সুফল আগামী রমজান মাসে পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। সাধারণত রমজানে অগ্নিমূল্য হয়ে ওঠা খেজুর, ছোলা, ডাল, তেল ও চিনির দামে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাধারণ সীমিত আয়ের কোটি কোটি ভোক্তা ক্রেতা সেই শুভ সময়ের অপেক্ষায় এখন প্রহর গুণছেন।