একটি মানবিক সিদ্ধান্ত বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:০৬ অপরাহ্ন
দেশে কোটি মানুষ যখন বেকার ও অর্ধ বেকার, ব্যবসা বাণিজ্যে চরম মন্দা এবং প্রধান খাদ্যপণ্য চালসহ অনেক পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, তখন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি প্রস্তাবে অনেকে হতবাক হয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা এমন বৈষম্যমূলক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টার কার্যালয়ে ভাতা সংক্রান্ত নথি পাঠালে সায় না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আপাতত এ ভাতা দেওয়া সমীচিন হবে না। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিষয়টি ফের বিবেচনা করা যেতে পারে।
লক্ষণীয় যে, সাড়ে ১৪ লাখ সরকারী চাকরীজীবিকে মূল বেতনের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার খসড়া প্রস্তুত করেছিলো অর্থ বিভাগ। তবে ইতোমধ্যে পাওয়া সরকারী চাকরীজীবিদের বাড়তি ও শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) বাদ দেয়ার সুপারিশও করা হয়। অর্থ বিভাগের হিসাবে এটি বাস্তবায়নে এক অর্থ বছরে খরচ হবে অন্তত সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, মহার্ঘ ভাতার বাড়তি অর্থায়নের হিসাব করা হয়েছে চলতি বাজেটের বরাদ্দের ভিত্তিতে। তবে প্রতি বছর বাজেটে বেতন-ভাড়া খাতে বরাদ্দ ৬ থেকে ৮ শতাংশ বাড়ে। সে হিসাবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দাঁড়াতে পারে প্রায় সাড়ে ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা যোগ হতো আরো প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থ বছরে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হতো সাড়ে ৯৬ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ প্রায় লক্ষ কোটি টাকা।
সচেতন মহল মানে করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনশীল মুদ্রানীতির পাশাপাশি সরকারী ব্যয়ে কাটছাঁট করার কথা বলা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এখনই মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার যৌক্তিক সময় নয়। এ প্রসঙ্গে বিশ^ ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মহার্ঘ ভাতা দেয়ার পক্ষে অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়। কারণ এমন তো নয় যে সরকারী কর্মচারীরা খুব কম বেতনে চাকরী করছেন। ২০১৫ সালের পর থেকে সরকারী চাকরীজীবির বেতন বেসরকারী খাতের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে।
বলা বাহুল্য, বিগত সরকারের আমলে সরকারী চাকরীজীবিদের কয়েক দফা বেতন ও ভাতা বৃদ্ধির সময় কখনোই বেসরকারী চাকরীজীবি কিংবা সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করা হয়নি। জনগণের অর্থ থেকে যখন খুশি তখন হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জনসংখ্যার ক্ষুদ্র একটি অংশকে খুশি রাখার জন্য। সরকারী নীতি নির্ধারক আমলারা যেভাবে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছেন, তা অনুমোদন দিয়েছে ক্ষমতাসীন মহল। শুধু অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ঘুষ কিংবা উপঢৌকন হিসেবে এভাবে জনগণের অর্থ বিতরণ বরাদ্দ করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি এই স্বার্থন্বেষী কায়েমী আমলা গোষ্ঠী যখন দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা, মূল্যস্ফীতি ও জনগণের আর্থিক কষ্টের কথা বিবেচনা না করে আবারো বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ের অনুসরণে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব মেলে ধরেন। কিন্তু এখন তো আর স্বৈরাচারী হাসিনার আমল নয় যে বললেই সরকার প্রধান বেসরকারী চাকরীজীবি ও সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করেই এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত নেবেন। এ কথা অনস্বীকার্য যে, হুট করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর বেতন-ভাতা বৃদ্ধি দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। এতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ আরো বাড়ে, যদি না তাদের জন্যেও প্রণোদনা ও আয়বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে বেসরকারী চাকরীজীবি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীসহ সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষ চরম আর্থিক সংকটে আছেন। কোটি লোক বেকার ও অর্ধ বেকার। এ অবস্থায় তাদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কোন উদ্যোগ না নিয়ে শুদু ১৮ লাখ সরকারী চাকরীজীবির বেতন-ভাতা আরেক দফা বৃদ্ধি যেমন বৈষম্যমূলক, তেমনি অমানবিক। তাই সরকারের শীর্ষমহল কর্তৃক মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির উপরোক্ত সিদ্ধান্ত যৌক্তিক বলে মনে করেন সচেতন মহল।