রূপাদের লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:৫৫ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মিডিয়ায় ‘স্বেচ্ছাচারী’ আটকঃ সাংবাদিক দম্পতি শাকিল-রূপার আইনি দলের জাতিসংঘে অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গ্রেফতারের পর থেকে সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রূপা ও শাকিল আহমেদকে ১৫০ দিনের বেশী সময় ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাদের আইনী দল দাবি করেছে, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
লন্ডনভিত্তিক আইনজীবী গ্যালাঘার ডিওএ’কে বলেন, এটি সরকারের প্রতিশোধমূলক আইনের একটি উদাহরণ। সমালোচকদের দমন করতে আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতা এমন মানসিকতার জন্ম দিতে পারে এবং সে মানসিকতা আক্রমণ ও খুনের কারণ হতে পারে, এ ধরনের দাবি আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থহীন।
বলা বাহুল্য, কোন সাংবাদিক যখন সাংবাদিক যখন সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা ও আদর্শ ভুলে কোন রাষ্ট্রক্ষমতা কিংবা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে, তখন সে আর সাংবাদিক থাকে না। পরিণত হয় রাজনৈতিক ব্যক্তিতে। উপরোক্ত সাংবাদিক দম্পতি কট্টর আওয়ামী লীগ তথা তৎকালীন সরকারপন্থী মিডিয়া একাত্তর টিভি’র প্রধান দু’টি পদে ছিলেন। এদেশের দর্শক শ্রোতারা লক্ষ্য করে তারা কীভাবে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সত্য ও সঠিক সংবাদ প্রকাশ না করে ঢালাও ও পরিকল্পিতভাবে সরকারী দলের পক্ষে নিউজ প্রতিবেদন প্রচার করেছেন। তাদের বক্তব্য ও উপস্থাপনা এবং নিউজ সম্প্রচারের লক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যেতো অনেকটা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর প্রতি তারা আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত ও সমর্পিত। এ অবস্থায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের খুন, গুম, অর্থ লোপাট, অর্থ পাচারসহ সকল অপরাধে সহযোগিতা করতে তারা সাংবাদিকতা মাধ্যমকে ব্যবহার করেন। ছাত্রলীগ অস্ত্রশস্ত্র
নিয়ে বিরোধী শায়েস্তা করে ক্ষমতাসীনদের যেমন সহযোগিতা করে তেমনি মিথ্যা ও বানোয়াট এবং আক্রমনাত্মক উস্কানীমূলক সংবাদ, বক্তব্য ও প্রতিবেদন প্রচার করে সরকারকে সহযোগিতা করেন শাকিল ও ফারজানা রূপার মতো সাংবাদিকরা।
কথায় আছে, লেখনী তরবারীর চেয়েও শক্তিশালী। এই সাংবাদিক দম্পতি তাদের লেখনীকে ব্যবহার রেছেন স্বৈরাচারী মহলের পক্ষে ও স্বার্থে এবং জনগণের বিপক্ষে। যখন স্বৈরাচারী হাসিনা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে, তখন ফারজানা রূপারা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়ে তার তোষামোদে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন পার্থিব সুযোগ সুবিধা ও আনুকূল্য লাভের আশায়। এতে তারা আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে লাভবান হলেও জাতি বঞ্চিত হয় তাদের বস্তুনিষ্ট সৎ সাংবাদিকতা থেকে, জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও সেবা থেকে। এমনকি জনগণ অরক্ষিত হয়ে পড়ে স্বৈরাচারী শাসকদের স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ ও আচরনের কাছে।
এখন বর্তমান সরকার আইন অনুযায়ী তাদের অপরাধের বিচার শুরু করেছে, তাদের আটক করেছে। এটা কোনভাবেই স্বেচ্ছাচারী আচরণ বা পদক্ষেপ নয়। অপরাধীর বিচার করতে গেলে সেই অপরাধ যদি দাবি করে যে, তার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হচ্ছে, তবে সে তা বলতে পারে, দাবি করতে পারে, কারণ এটা তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। তাই বলে এ নিয়ে সচেতন ও বিবেকবান মানুষের উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই। কারণ সাধারণতঃ সব অপরাধীই নিজেদের নির্দোষ মনে করে ও দাবি করে থাকে। ফারজানা রূপা এখন আহাজারি করছেন ও নিজের সংসার-সন্তানের জন্য। কিন্তু যখন হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে একজন নিরীহ সন্তানের মা ও একজন মায়ের সন্তানকে অন্যায়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়, তখন তিনি ও তার স্বামী কোন নিউজ করেননি এর বিরুদ্ধে। বরং এসব ঘটনা চেপে গেছেন কিংবা এর পক্ষে সাফাই গেয়ে সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করেছেন। এ অবস্থায় তাদের এ ধরনের অন্যায় অপকর্ম ও অপরাধকে জায়েজ করতে যারা সাংবাদিকতার মহৎ পেশাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার চেষ্টা করছেন, তাদের ভূমিকা যে অবশ্যই নিন্দনীয় ও ঘৃণিত, এতে কোন সন্দেহ নেই।