ব্যর্থ হবে মূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:১৫ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘রমজানে নিত্যপণ্যের সংকট তৈরির চেষ্টা ব্যবসায়ীদের’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রমজানকে টার্গেট করে বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই নিত্যপণ্য আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন সংকট থাকলেও রমজানে জনগণকে স্বস্তি দিতে এলসি সহায়তার পাশাপাশি আমদানি রফতানিও নীতিগত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সব মিলিয়ে বাজারে পণ্যের অভাব নেই এ বছর। কিন্তু শেষ সময়ে এসে কৃত্রিম তৈরির অপচেষ্টা শুরু করেছে, এ কাজে বেছে নেয়া হয়েছে লাইটার জাহাজগুলোকে। দেশের বিভিন্ন ঘাটে ভাসমান গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সাড়ে তিন শতাধিক লাইটার জাহাজ। ফলে ভেঙ্গে পড়েছে সাপ্লাই চেইন। অভ্যন্তরীণ নৌরুটে পণ্য পরিবহনের কাজে প্রায় দেড় হাজার লাইটার জাহাজ চলাচল করে, যার বেশির ভাগই চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক। বহিনোঙরে নোঙর করা মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস করে দেশের বিভিন্ন ঘাটে পৌঁছে দেয় এসব লাইটার জাহাজ। তবে বর্তমান সময়ে চট্টগ্রামের তুলনায় মংলা ও পায়রায় মাসুল কম হওয়ায় আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে ওই দিকে ঝুঁকেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে অনেক জাহাজ চট্টগ্রামের দিকে আসছে না নিয়মিত। এতে বেশ কয়েক মাস ধরেই লাইটার জাহাজের টান পড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। সম্প্রতি এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে লাইটার জাহাজের অভাবে বহিনোঙরে মাদার ভেসেল অর্থাৎ মূল জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে। এতে এদদিকে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বাড়ছে, অন্যদিকে ডেমারেজ চার্জ গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পণ্যের ক্রেতা-ভোক্তাদের ওপর। পণ্যের দাম বাড়ছে এভাবে।
অভিযোগ রয়েছে, রমজানকে কেন্দ্র করে আমদানি করা বিপুল পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছলেও একটি স্বার্থন্বেষী মহলের কারণে তা বাজারে আসছে না। একশ্রেণীর বড়ো আমদানিকারক লাইটার জাহাজ আটকে রাখায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে চললে রমজানের মধ্যে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। অবশ্য লাইটার জাহাজ চালক শ্রমিক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের মতে, রমজানের আগ মুহূর্তসহ বছরের বিভিন্ন সময়ে পণ্যের মজুত বেশি থাকায় বিভিন্ন এলাকায় গুদামের সংকট তৈরি হয়। জাহাজ ভাড়ার চেয়ে অনেক এলাকায় গুদাম ভাড়া বেড়ে যায়। এসব কারণেও অনেক লাইটার জাহাজকে ভাসমান গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এবার এই পরিমাণটা বেশি অন্যান্য বারের চেয়ে। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙরে পণ্য বোঝাই ৪৮টি লাইটার জাহাজ ভাসমান অবস্থায় আছে। অথচ পণ্য খালাস করতে মাদার ভেসেল প্রতি ১৩টি করে লাইটার জাহাজের চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও পর্যাপ্ত লাইটার একটি জাহাজও পাঠানো হয়নি। ফলে প্রতিটি মাদার ভেসেলে দৈনিক ২০ হাজার ডলার করে ডেমারেজ চার্জ বা বিলম্প ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। বাড়তি এই খরচ ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়ে।
লক্ষণীয় যে, রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার বেশ কিছু খাদ্য পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোসহ নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছে, যার ফলে স্বাভাবিক সময়ে চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু লাইটার জাহাজ সংকটের কারণে তা বাজারে পৌঁছাচ্ছে না। বলা বাহুল্য, স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে সরকারের শীর্ষ মহলের আশ্রয় প্রশ্রয় ও স্বার্থ ভাগাভাগিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এখনো পুরো ভাঙ্গেনি। পণ্য আমদানি ও ব্যবসার লাইসেন্স একটি শ্রেণির কুক্ষিগত ও এক চেটিয়া না রেখে, উন্মুক্ত করে দেয়ার ফলে অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক কারসাজি তথা যখনতখন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির তৎপরতা প্রবণতা অল্প হ্রাস পেয়েছে। ফলে কিছু পণ্যের দাম হ্রাস পেয়েছে। অনেক পণ্যের মূল্যের উর্ধমুখী গতি বন্ধ হয়েছে কিন্তু এমন ইতিবাচক পরিস্থিতি দেশে যখন খাদ্যপণ্যসহ প্রচুর নিত্যপণ্য আমদানি হচ্ছে তখন নতুন কারসাজি শুরু করেছে একশ্রেণির আমদানিকারক। তারা লাইটার জাহাজে পণ্য আটকে রাখছে। মাদার জাহাজ থেকেও পণ্য খালাসে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এ অবস্থায় পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি, মূল্যবৃদ্ধি কমানো তথা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে চলেছে এই নতুন ধরণের কারসাজির কারণে। এমন ধ্বংসাত্মক তৎপরতা রোধে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা এদিকে সরকারের শীর্ষ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।