পানি সংকট নিরসনে ব্যর্থতার নেপথ্যে
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:৫৪ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘ওয়াসায় আটকা সিলেট নগরের পানি প্রকল্প’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিলেট নগরীর চাহিদার অর্ধেক সুপেয় পানি ও সরবরাহ করতে পারছে না সিলেট সিটি কর্পোরেশন। কর্পোরেশনের নতুন ১৫ টি ওয়ার্ডে এখনো পানির লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আর পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডের ২৪ টিতে পানি সরবরাহ করা হলেও তা চাহিদার অর্ধেকেরও কম।
সিলেটে ওয়াসার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় পানি সংকট নিরসনে নগর ভবনের পক্ষ থেকে নতুন করে কোন প্রকল্প নেয়া যাচ্ছে না। ওয়াসার কারণে সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত ‘চেঙের খাল ওয়াটার প্ল্যান্ট’ প্রকল্পটিও ঝুলে আছে। এ অবস্থায় আসন্ন রমজান মাসে পানি সংকট বৃদ্ধির আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
গত বছর ৪ জানুয়ারী জাতীয় মিডিয়ায় সিলেট নগরীর পানি ঘাটতি সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘সিলেট নগরীতে চাহিদার তুলনায় পানির ঘাটতি ৪৭ শতাংশ’ শিরোনামে প্রকাশিত এই সংবাদে বলা হয়, সিলেট নগরীতে পানির চাহিদা বাড়লেও সেই অনুপাতে পানি সরবরাহ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, সিলেট ওয়াসা প্রতিষ্ঠা হলেও ওয়াসা বোর্ড গঠন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত নগরীর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা বর্তমানের মতো পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৪ সালে ২৭টি ওয়ার্ডের মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ‘চেঙের খাল পানি শোধনাগার প্রকল্পটি’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে সিসিকের ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়েছে ৪২। পানির চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিন্তু পানির উত্তোলন ক্ষমতা সেভাবে বাড়েনি। অনেকটা বাধ্য হয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করে সাময়িকভাবে এ সমস্যা সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
লক্ষণীয় যে, সিলেট নগরীর পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে দক্ষিণ সুরমায় ৩ টি ওয়ার্ডে লাইন লাইন স্থাপন করা হলেও এখনো পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ২৭টি ওয়ার্ড মিলে দৈনিক সুপেয় পানির চাহিদা সাড়ে ১০ কোটি লিটার। আর বর্তমানে চালু থাকা ২৪ ওয়ার্ডে প্রয়োজন সাড়ে ৮ কোটি লিটার। কিন্তু চাহিদারচ বিপরীতে দৈনিক সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র সাড়ে তিন থেকে ৪ কোটি লিটার। বর্তমানে নগরীর কুশিঘাটে দু’টি প্ল্যান্টের মাধ্যমে সুরমা নদীর পানি পরিশোধনের মাধ্যমে নগরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে। ওই দু’টি প্ল্যান্ট ২৪ ঘণ্টা চালু থাকলে দৈনিক ২ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু প্ল্যান্ট দু’টি ১২ ঘণ্টা চালু থাকায় উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লাখ লিটার পানি।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ৪৫ টি গভীর নলকূপ থেকে প্রতিদিন সরবরাহ হচ্ছে আড়াই থেকে ৩ কোটি লিটার পানি। শুরুতে নলকূপগুলোর উত্তোলন ক্ষমতা দ্বিগুণ থাকলেও বর্তমানে যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে যাওয়ায় উত্তোলন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। সিসিক সূত্র জানায়, চেঙের খাল পানি শোধণাগার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট শহরতলীর বাদাঘাট এলাকার চেঙের খাল নদী থেকে প্রতিদিন ৫ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি নগরীতে সরবরাহ করা সম্ভব হতো। এতে পুরো নগরীর ৮০ ভাগ পানির চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু ওয়াসা আর সিসিকের টানাপোড়েনে ভেস্তে যেতে বসেছে প্রকল্পটি। সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী জানান, ওয়াসার কমিটির বেশির ভাগ দায়িত্বশীল এখন সিলেটে নেই। ওয়াসা গঠনের পর থেকে পানি সংকট নিরসনে সিসিক অর্থাৎ সিলেট সিটি কর্পোরেশন কোন প্রকল্পই হাতে নিতে পারছে না। ফলে পানি সংকটও নিরসন হচ্ছে না। ভুক্তভোগী নগরবাসী এই সংকট নিরসনে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।