সাবধান, ফলে রাসায়নিক!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:১০ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মিডিয়ায় ‘আঙ্গুরে রাসায়নিক, কিনে এনে যেভাবে পরিষ্কার করবেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এখান চলছে আঙ্গুরের মৌসুম। এখন বাজারে দেখতে টাটকা আঙ্গুর পাওয়া যাচ্ছে। আর তাজা রাখতে কৃত্রিম রঙ কিংবা রাসায়নিক মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া আঙ্গুর গাছে কীটনাশকের ব্যবহারের কারণেও আঙ্গুরে মেশে নানা ধরণের রাসায়নিক। তাই কিনে এনে কেবল পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে এগুলো থেকে কীটনাশক দূর না-ও হতে পারে।
এ বিষয়ে খাদ্যের গুণমান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (এফএসএসএআই) জানাচ্ছে, বাজারে বিক্রি হওয়া অনেক আঙ্গুরই তাজা দেখাতে তাতে কৃত্রিম রঙ মেশানো হয়। আর কীটনাশকের কারণেও আঙ্গুরে মেশে নানা ধরণের রাসায়নিক। তাই শুধু পানিতে ধুয়ে নিলে কীটনাশক দূর হয় না। আর এ অবস্থায় তা খাওয়া হলে শরীরের ক্ষতি অনিবার্য। বিশেষভাবে শিশুদের জন্য এগুলো বেশী ক্ষতিকর, কারণ তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বয়স্কদের চেয়ে কম। ভারতের অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যা-ি প্রোসেসড্ ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি’র (এপিইভিএ) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া আঙ্গুর বা ফল তেমনভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় না। তাই সেগুলোতে কীটনাশকের অতিরিক্ত প্রয়োগ ধরা পড়ে না। কীটনাশক খাবরের মাধ্যমে শরীরে পৌঁছালে, তা রক্তের সঙ্গে মিশে নানা রকম রোগের জন্ম দেয়। এতে হরমোনের তারতম্য দেখা দিতে পারে, ¯œায়ূর কার্যকারিতাও বিঘিœত হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, অনেক দিন ধরে এই বিষ শরীরে মিশতে থাকলে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কীটনাশক দূর করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো লবণ পানিতে আঙ্গুর ডুবিয়ে রাখা। অন্ততঃ আধাঘন্টা লবণ পানিতে আঙ্গুর ভিজিয়ে রেখে তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ফলে গায়ে লেগে থাকা রাসায়নিক অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। এছাড়া দোকান থেকে কিনে আনা রাসায়নিক মিশ্রিত কোন দ্রবনে সবজি ধোয়া যাবে না। বরং বাড়িতেই বানিয়ে নিন বেকিং সোডা ও পানির দ্রবণ। এই দ্রবণে আঙ্গুর সবজি ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এতে ৯০ শতাংশ কীটনাশক দূর হয়ে যাবে।
বলা বাহুল্য, এখন বাজারে সুস্বাদু রসালো ফলে প্রাচুর্য। কিন্তু ফল খেতে গিয়ে অনেকের মনে একটি ভয় কাজ করে, তা হলো ফরমালিন। অনেকে ফরমালিনের ভয়ে খাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন। শিশুদেরও ফল খাওয়াচ্ছেন না। আসলে ফল বা শাকসবজি ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয় না। ফরমালিন শুধু প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সংরক্ষণেই ব্যবহার করা হয়। অবশ্য ফল পাকাতে যে সব উপাদান (যেমন কার্বাইড) ব্যবহৃত হয়, তা ক্ষতিকর। গত বছর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘কটিয়াদিতে মৌসুমী ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক : হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে মৌসুমী ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথাইলিন ও ইথরিল স্প্রে করে পাকানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের ফল। কটিয়াদি বাজারে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ফলগুলোর অধিকাংশই কৃত্রিমভাবে পাকানো। বাণিজ্যিকভাবে কলাসহ সব ধরণের ফল পাকানোর জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনারস ১২-১৫ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। কিন্তু ৫০০ পিপিএম এনএনএ বা ১০০ পিপিএম জিএ-৩ তাপমাত্রায় ৪১ দিন পর্যন্ত আনারস সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করে সব ফলই স্বাভাবিক সময়ের আগেই পাকানো হচ্ছে। মূলত জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর ইথাইলিন জাতীয় গ্যাস ও ইথরিল (এক ধরণের হরমোন) স্প্রে করে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে ফলমূল পাকানো হয়। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। যা-ই হোক, বাজারে এখন লোভনীয় দেশী বিদেশী ফলে সমাহার। এগুলোর বেশির ভাগই কেমিক্যাল ট্রিটেড অর্থাৎ ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত। এদিকে প্রশাসন তথা জনস্বাস্থ্য বিভাগকে আদৌ কোন দৃষ্টি বা মনোযোগ দিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক ফলমূল খেয়ে ভোক্তাদের ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।